সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক শ্বাসরুদ্ধকর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার উচ্চতায় সিচাংয়ে চীনের প্রথম টাওয়ার সৌর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ২.০৩৭ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগে পরিচালিত এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটি চীনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে এক নতুন অধ্যয়ের সূচনা করতে চলেছে।
গলিত লবণ প্রযুক্তি ও ১৬,০০০ হেলিওস্ট্যাট: এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গলিত লবণ টাওয়ার প্রযুক্তি (Molten Salt Tower Technology) ব্যবহার করা হবে, যা সৌরশক্তিকে অত্যন্ত কার্যকরভাবে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৬,০০০ হেলিওস্ট্যাট বা সূর্যমুখী আয়নার বিশাল অ্যারে। এই আয়নাগুলো সূর্যের আলোকে কেন্দ্রীভূত করে টাওয়ারের চূড়ায় অবস্থিত রিসিভারে পাঠাবে, যেখানে গলিত লবণ উচ্চ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত হবে। এই উত্তপ্ত লবণ তাপশক্তি সঞ্চয় করবে এবং প্রয়োজনে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এই পদ্ধতি সৌরশক্তিকে পরিষ্কার বিদ্যুতের একটি স্থিতিশীল সরবরাহে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করবে, যা দিনের আলো না থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়ক হবে।
সিচাং-এর মতো উচ্চতায়, যেখানে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কম, সেখানে এই ধরনের একটি বৃহৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তবে, এই প্রকল্প প্রমাণ করে যে চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সিচাং অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং একই সাথে চীনের কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখবে।
এই সৌর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কেবল সিচংয়ের জন্য নয়, সমগ্র চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। এটি প্রমাণ করবে যে চরম ভৌগোলিক অবস্থানেও বৃহৎ আকারের পরিষ্কার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, যা ভবিষ্যতে আরও অনুরূপ প্রকল্পের পথ প্রশস্ত করবে। এটি চীনের জ্বালানি নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সূত্র:- সিএমজি