Sunday, November 16
Shadow

Tag: গল্প

রক্তজবার মায়াজাল: স্মৃতি, প্রেম ও অধরা বাস্তবতা

রক্তজবার মায়াজাল: স্মৃতি, প্রেম ও অধরা বাস্তবতা

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
কাইয়ুম আজাদ : বৈশাখ মাসের অন্তিম দিন। বেলা তখন দশ প্রহর। মতলব চাচা আর আমি বিদ্যাগঞ্জ রেল স্টেশনের নিরবচ্ছিন্ন অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আজকাল বেগুনবাড়ি স্টেশনে রেলগাড়ি আর থামে না, তাই বিদ্যাগঞ্জই একমাত্র ভরসাস্থল। আমাদের গন্তব্য জামালপুরের দুরমুট হযরত শাহ্ কামাল রহমাতুল্লাহ আলাইহির পুণ্য মাজার শরীফ জিয়ারত করা। সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়েই এখানে ওরস চলে, আর আজই সেই পুণ্য ওরসের পরিসমাপ্তি। বাদ এশার পর আখেরি মোনাজাতের পুণ্য লগ্ন। আমার পকেটে দুইটি রক্তজবা পুষ্প, কারণ আজ আরও এক অপ্রকাশিত সত্তার সহিত সাক্ষাৎ হইবার কথা, সে কে, তা উন্মোচিত হবে যথাসময়ে। দশ প্রহরের ট্রেন একাদশ প্রহর অতিক্রান্ত করিয়াও আসার কোনো হেতু প্রদর্শন করিল না। আমরা চা স্টলের সামান্য পরিসরে উপবিষ্ট হইয়া উষ্ণ চা পান করিতেছি। মতলব চাচা ক্ষণে ক্ষণে দূরভাষ যন্ত্র বাহির করিয়া সজীব সম্প্রচার করিতেছেন, জ্ঞাত করিতেছেন আমাদের গন্তব্য ও...

তোমার জন্য বৃষ্টিদিন

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
এ. কে. এম. নাজমুল আলম “সব প্রেম কি শেষ পর্যন্ত প্রেমই থাকে?” এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল অরণীর মনে—বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যেতে যেতে, আবারও এক পুরনো রিকশার ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে... বৃষ্টি শুরু হয়েছিল হঠাৎ করেই। রাজধানীর ব্যস্ত বিকেল, অফিসফেরতা মানুষের জটলা, তাড়াহুড়ো। অরণীও ছুটছিল, তবে বাইরের জন্য না, ভেতরের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে। হঠাৎ করেই সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর— "অরণী?" কণ্ঠটা চেনা, এতটাই চেনা যে শরীরের প্রতিটি স্নায়ু জেগে উঠলো। সে ছিল ইশান। পাঁচ বছর আগে যে মানুষটা এক কাপ কফির টেবিলে বলে দিয়েছিল, "তুমি অনেক ভালো, কিন্তু আমাদের পথ আলাদা।" আজ তারা আবার এক ছাউনির নিচে। ইশান ভিজে একাকার, অরণীর ছাতার নিচে ঢুকলো না, শুধু তাকিয়ে থাকলো। চোখে অদ্ভুত অভিমান আর অনুশোচনা—হয়তো মেশানো কিছু অনুভব। "তুমি কেমন আছো?" —অরণী জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু গলায় কম্পন ছিল...
ছোটগল্প: দৈত্যের শহরে

ছোটগল্প: দৈত্যের শহরে

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
সাবিত রিজওয়ান নদের তীরে এসে দেখি—জলের চেয়ে আবর্জনাই বেশি। কোথাও টলটলে জল নেই, আছে শুধু নোংরা গন্ধ আর নষ্ট জীবনের ছাপ। দূরগন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে, মশারা গান গেয়ে গেয়ে মাথা খাচ্ছে! মনে হচ্ছে আমি কোনো যুদ্ধের ময়দানে, ট্যাঙ্কের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। না, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না। পালাতে হবে—নইলে দেহে জ্বর উঁকি দেবে। সন্নিহিত কে-জি স্কুলটার সামনে গিয়ে দেখি—কয়েকজন অদ্ভুতদর্শন মানুষ নয়, কী যেন! যেন ভয়ংকর প্রাণী। তারা এক মৃতদেহকে কাবাব বানিয়ে খেতে ব্যস্ত। খাচ্ছে, হাগছে, থু থু দিচ্ছে—সব একসাথে।  তারা একটি তরল পদার্থ পান করছে, যার গন্ধ প্রস্রাবের মতো। তাদের মাথায় যেমন চুলের কাটিং, যেন চুল নয়, সাপের গুচ্ছ। চোখের রঙ প্রকৃত নয়—চোখের মাঝে অর্থাৎ চোখের তাঁরাও বিকৃত। এগুলো কি শিল্প? কারো কারো ভ্রু, পাতায় আঁকা বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি, যেমন— মোটরসাইকেল, সিগারে...
জাদুর পুকুর

জাদুর পুকুর

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
ওমর ফারুক আশরাফি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কুলিকুন্টা গ্রামটি শান্ত-নিবিড় প্রকৃতির এক অপূর্ব কোণে অবস্থিত। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে আছে প্রাচীন এক আমবাগান, আর সেই বাগানের পেছনে ছায়া ঢাকা একটি পুকুর। পুকুরটি ঘিরে ছড়িয়ে আছে বহু রহস্যময় গল্প ও লোককথা। সে পুকুরের পাশে দাঁড়ালে আজও যেন বাতাসে ভেসে আসে এক অতীতের গন্ধ, এক অদ্ভুত শিহরণ। পুকুরটির পাশেই রয়েছে ভূঁইয়া বাড়ি—একসময়ে যার নাম উচ্চারণেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়তো সম্মান আর গৌরব। বড়, প্রাচীন, দোতলা সেই বাড়িটি ছিল ধন-সম্পদ, আতিথেয়তা ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। নানুর মুখে শুনেছি, সেই বাড়িতে যখনই কোনো বিয়ের আয়োজন হতো, পুকুর থেকে স্বর্ণের থালা-বাটি ভেসে উঠতো। কেউ জানতো না ওগুলো কোথা থেকে আসে, কারা রেখে যায়, তবে সবাই জানতো—এটা ছিল এক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ। ভূঁইয়া বাড়ির বড় ছেলে ছিলেন আভু ভূঁইয়া। সৌম্য চেহারা, দৃঢ়চেতা মন ও দরদভরা হ...
এক না পাওয়া ভালবাসা

এক না পাওয়া ভালবাসা

গল্প, সাহিত্য
রকিবুল ইসলাম :হামিদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে, অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হলাম হামিদপুর আলহেরা মহাবিদ্যালয়ে। মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে থাকলেও উচ্চমাধ্যমিকে এসে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। অথচ ভর্তি হওয়ার কথা ছিল যশোর সিটি কলেজে। ভাগ্যিস সেদিন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের বোমাবাজিতে ভয় পেয়ে ওখানে ভর্তি না হয়ে আলহেরা কলেজে এসেছিলাম। এটা হওয়ারই ছিল। বিধাতা লিখে রেখেছিলেন ললাটে। তা না হলে হয়তো আসমার সাথে আমার দেখা হত না কখনোই। দুধে আলতা গায়ের রং, লিকলিকে গড়ন, মানানসই উচ্চতা আর ঘাড় বাঁকানো চুলে বেশ বাহারি লাগত মেয়েটাকে। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে তার মাঝে নিহিত ছিল বন্ধু ভাবাপন্ন মনোভাব। নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিন থেকেই তার সাথে আলাপ। সেও বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। বাণিজ্য বিভাগে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকায় আমরা ক্লাসের একে অপরের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্...