Wednesday, October 1
Shadow

গল্প

সংক্ষিপ্ত কিন্তু হৃদয়ছোঁয়া গল্পের সমাহার। রহস্য, রোমাঞ্চ, প্রেম, মানবিকতা—বিভিন্ন স্বাদের বাংলা ছোটগল্প পড়ুন, অনুভব করুন নতুন গল্পের জগৎ।

সন্দেহ

সন্দেহ

গল্প, সাহিত্য
আরফান হাবিব, বান্দরবান বিয়ের একবছর পরেও কলিগরা আমাকে জিজ্ঞেস করে আমাদের এফেয়ার ম্যারেজ কি-না? আমি লাজুক মুখেতাকাই, কিছু বলতে পারিনা। ঘরে বউ প্রতিদিন ফেইসবুক হিস্ট্রি চেক করে আর বিগত সব স্টাটাস নিয়েসন্দেহ করে। এটা কোন এক্সকে নিয়ে লিখেছো, কয়টা এফেয়ার ছিলো… আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখিশুধু। ওকে বুঝাতে পারিনা এ শতাব্দীর প্রথম দশকের আমার দ্বিতীয় দশকের বেড়ে উঠাদের চেয়ে আলাদা। মধ্যবিত্তপরিবারের সবচেয়ে বড় চাহিদা একটা চাকুরি, ব্যস্ত ছিলাম সেটা নিয়ে। বউকে সারপ্রাইজ দিতে ইচ্ছেকরে, তাই লুকিয়ে ওর একটা কাপড় নিয়ে টেইলার্সকে দিই মাপের জন্য সাথে আমার পছন্দের গজ কাপড়।ভেবেছিলাম সেলাই হলে সারপ্রাইজ দিবো। হলো উল্টো, বাসায় কাপড়টা না পেয়ে ছাদে সব ভাবির সাথেসে একটা রীতিমতো হাঙ্গমা লাগিয়ে দিলো। আমি সাহস করে কিছু আর বলতে পারিনি। কিছু দিন সবভুল থাকলাম। টেইলার্স থেকে কাপড় আনতে যাই নি দেখে টেইলর ফোন করে। ফোনে কার সাথে...

তোমার অপেক্ষায়

গল্প, সাহিত্য
মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন ইবনে মোস্তাফিজ রাত গভীর। জানালার কাঁচে জমে ওঠা শিশিরের ফোঁটাগুলো যেন তারই মনের ভেতর জমে থাকা স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘরের ভিতরেও। এক কোণে একটা ছোট্ট টেবিল, টেবিলের ওপর খোলা একটা ডায়েরি। ছেলেটি ডায়েরির পৃষ্ঠায় কলম চালাচ্ছে। ভাবনার জোয়ারে ভাসছে মনটা। সে এক অবিবাহিত পুরুষ, অথচ তার লেখাগুলো যেন রোমান্সের সরল নদী। আমার প্রিয়তমা, আজও আমি তোমায় অনুভব করি। জানি না তুমি কোথায়, তবে নিশ্চিত আমি তুমি আমারই জন্য গড়া। তোমার হাতে তুলে দেওয়া পানির গ্লাসেও আমি খুঁজে পাবো শ্রদ্ধা, আর আমি তোমার হাত ছুঁয়ে বোঝাতে চাই এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা শুধু তোমার জন্যই সঞ্চিত রেখেছি। তুমি হয়তো কখনো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে স্রেফ চোখ নামিয়ে নেবে সংস্কারের লালিত্যে। কিন্তু আমি তো জানি, তোমার সে চোখে থাকবে আমার প্রতি অগাধ ...
গল্পের নাম: “শেষ ট্রেনটা যখন ছাড়ে”

গল্পের নাম: “শেষ ট্রেনটা যখন ছাড়ে”

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
এ. কে. এম. নাজমুল আলম : ভালোবাসা সবসময় চিৎকার করে আসে না, কখনো কখনো চলে যায়— একদম শব্দ না করে...” নিরা ট্রেন ধরতে দৌড়াচ্ছিল। চোখে-মুখে ক্লান্তি, হাতে ভারি ব্যাগ, মনে একরাশ অভিমান। একটা ব্যর্থ সম্পর্কের শেষ ছুঁয়ে ফেরা কেউ আর কি-ই বা নিয়ে ফেরে? ঠিক তখনই ধাক্কা খেয়ে পড়লো। একটা হাত তাকে টেনে ধরলো। “সাবধান! ট্রেন তো থামেই না, মন ভাঙা মানুষ তো আরও তাড়াতাড়ি পড়ে যায়!” বললো ছেলেটা, মুখে হালকা হাসি, চোখে গভীর বিষাদ। ছেলেটার নাম ছিল নাঈম পাশাপাশি বসা দুই অচেনা মানুষ— কিন্তু ট্রেন যতদূর যাচ্ছিল, তাদের মধ্যকার দূরত্ব যেন কমে আসছিল। নিরা কথা বলতো কম, কিন্তু নাঈম কথা কমানো জানতো। সে বললো, "তোমার চোখে অভিমান, আর আমার জীবনে আফসোস—এই ট্রেন আমাদের ঠিকঠাক একসাথে এনেছে মনে হয়।" নিরা একটু হেসে বললো, "তুমি কবি না অভিনেতা?" "আমি আসলে হেরে যাওয়া মানুষ—তবে এখনো গল্প ...
রক্তজবার মায়াজাল: স্মৃতি, প্রেম ও অধরা বাস্তবতা

রক্তজবার মায়াজাল: স্মৃতি, প্রেম ও অধরা বাস্তবতা

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
কাইয়ুম আজাদ : বৈশাখ মাসের অন্তিম দিন। বেলা তখন দশ প্রহর। মতলব চাচা আর আমি বিদ্যাগঞ্জ রেল স্টেশনের নিরবচ্ছিন্ন অপেক্ষায় প্রহর গুনছি। আজকাল বেগুনবাড়ি স্টেশনে রেলগাড়ি আর থামে না, তাই বিদ্যাগঞ্জই একমাত্র ভরসাস্থল। আমাদের গন্তব্য জামালপুরের দুরমুট হযরত শাহ্ কামাল রহমাতুল্লাহ আলাইহির পুণ্য মাজার শরীফ জিয়ারত করা। সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়েই এখানে ওরস চলে, আর আজই সেই পুণ্য ওরসের পরিসমাপ্তি। বাদ এশার পর আখেরি মোনাজাতের পুণ্য লগ্ন। আমার পকেটে দুইটি রক্তজবা পুষ্প, কারণ আজ আরও এক অপ্রকাশিত সত্তার সহিত সাক্ষাৎ হইবার কথা, সে কে, তা উন্মোচিত হবে যথাসময়ে। দশ প্রহরের ট্রেন একাদশ প্রহর অতিক্রান্ত করিয়াও আসার কোনো হেতু প্রদর্শন করিল না। আমরা চা স্টলের সামান্য পরিসরে উপবিষ্ট হইয়া উষ্ণ চা পান করিতেছি। মতলব চাচা ক্ষণে ক্ষণে দূরভাষ যন্ত্র বাহির করিয়া সজীব সম্প্রচার করিতেছেন, জ্ঞাত করিতেছেন আমাদের গন্তব্য ও...

নীলিমার নীল শহর

গল্প, সাহিত্য
ইকবাল খান ঢাকার ব্যস্ত শহর। রাস্তায় গাড়ির গুঞ্জন, মাথার ওপর ভ্যাপসা রোদ, আর ক্লান্ত মানুষের ভিড়। ঠিক এই শহরের ভেতরেই বাস করে এক মেয়ে—নীলিমা। নীলিমা নামের মতোই সে ছিল অন্যরকম। চোখে স্বপ্ন, হাতে স্কেচবুক, আর কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ। সে ছিল শহরের একটা শান্ত কোণায় গড়া ছোট্ট আর্ট গ্যালারির শিক্ষিকা। প্রতিদিন সে শিশুদের রঙের ছোঁয়ায় পৃথিবীটা আলোকিত করতে শেখাতো। একদিন গ্যালারির দরজায় হাজির হয় অনিক—ঢাকার নামী একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। তার অফিস ছিল পাশেই, কিন্তু সে কখনো এই গ্যালারির ভেতরে পা রাখেনি। সে দিন ছিল বৃষ্টির। ছাতা ছিল না অনিকের। গ্যালারির ছাউনির নিচে এসে দাঁড়িয়েছিল সে। তখনই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে নীলিমা। – “ভিজে গিয়েছেন?” – “হ্যাঁ… এই শহরে ছাতা না থাকলে ভালোবাসাও মুছে যায়,” অনিক হেসে বলেছিল। নীলিমা একটু চমকে গিয়েছিল। হয়তো কথাটা গভীর ছিল...

মৃতের ফেরত যাত্রা 

গল্প, সাহিত্য
সাবিত রিজওয়ান সেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছি। মাঝপথে: চান্দিমা বাইপাসের ধারে কিছু হোটেলের সাইনবোর্ড চোখে পড়তেই শাহ আলম কাক্কু বলে উঠলেন,"তুফান, সামনের হোটেলে ট্রাকটা দাঁড় করাও। অনেক চালাইছো, এখন একটু লাঞ্চ করতে হবে"। কথাটা বলতে আমরা পৌঁছে গেলাম একটা রোডসাইট হোটেলে। আমরা মালবাহী গাড়ি চালাই; তাই কখনো কখনো যাত্রীবাহী গাড়ীর ড্রাইভার-হেল্পারদের তুলনায় একটু দু-চার মিনিট বেশি রেস্ট নিতে পারি। আজকেও ঠিক তাই—ডিমভাজা দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে রেস্ট নিচ্ছি।  পকেট থেকে স্মার্টফোনটা বের করে ডাটা অন করামাত্রই ফোনে নোটিফিকেশনের হিড়িক পড়ে গেল। "Clear All"-এ ক্লিক করতে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই চোখে পড়ল এক অদ্ভুত খবর‌‌‍— "দু'মাস আগের মৃত মানুষ, গত তিনদিন ধরে জীবত!"  প্রথমে ভূয়া খবর ভেবে পাত্তা দিলাম না। ইদানীং কাজের চাপ এতটাই যে, ফোনটাও ঠিকমতো ব্যবহার করি না। মালবাহী গাড়ির...

তোমার জন্য বৃষ্টিদিন

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
এ. কে. এম. নাজমুল আলম “সব প্রেম কি শেষ পর্যন্ত প্রেমই থাকে?” এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল অরণীর মনে—বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে যেতে যেতে, আবারও এক পুরনো রিকশার ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে... বৃষ্টি শুরু হয়েছিল হঠাৎ করেই। রাজধানীর ব্যস্ত বিকেল, অফিসফেরতা মানুষের জটলা, তাড়াহুড়ো। অরণীও ছুটছিল, তবে বাইরের জন্য না, ভেতরের অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে। হঠাৎ করেই সেই পুরোনো কণ্ঠস্বর— "অরণী?" কণ্ঠটা চেনা, এতটাই চেনা যে শরীরের প্রতিটি স্নায়ু জেগে উঠলো। সে ছিল ইশান। পাঁচ বছর আগে যে মানুষটা এক কাপ কফির টেবিলে বলে দিয়েছিল, "তুমি অনেক ভালো, কিন্তু আমাদের পথ আলাদা।" আজ তারা আবার এক ছাউনির নিচে। ইশান ভিজে একাকার, অরণীর ছাতার নিচে ঢুকলো না, শুধু তাকিয়ে থাকলো। চোখে অদ্ভুত অভিমান আর অনুশোচনা—হয়তো মেশানো কিছু অনুভব। "তুমি কেমন আছো?" —অরণী জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু গলায় কম্পন ছিল...
ছোটগল্প: দৈত্যের শহরে

ছোটগল্প: দৈত্যের শহরে

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
সাবিত রিজওয়ান নদের তীরে এসে দেখি—জলের চেয়ে আবর্জনাই বেশি। কোথাও টলটলে জল নেই, আছে শুধু নোংরা গন্ধ আর নষ্ট জীবনের ছাপ। দূরগন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে, মশারা গান গেয়ে গেয়ে মাথা খাচ্ছে! মনে হচ্ছে আমি কোনো যুদ্ধের ময়দানে, ট্যাঙ্কের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। না, এখানে আর এক মুহূর্তও থাকা যাবে না। পালাতে হবে—নইলে দেহে জ্বর উঁকি দেবে। সন্নিহিত কে-জি স্কুলটার সামনে গিয়ে দেখি—কয়েকজন অদ্ভুতদর্শন মানুষ নয়, কী যেন! যেন ভয়ংকর প্রাণী। তারা এক মৃতদেহকে কাবাব বানিয়ে খেতে ব্যস্ত। খাচ্ছে, হাগছে, থু থু দিচ্ছে—সব একসাথে।  তারা একটি তরল পদার্থ পান করছে, যার গন্ধ প্রস্রাবের মতো। তাদের মাথায় যেমন চুলের কাটিং, যেন চুল নয়, সাপের গুচ্ছ। চোখের রঙ প্রকৃত নয়—চোখের মাঝে অর্থাৎ চোখের তাঁরাও বিকৃত। এগুলো কি শিল্প? কারো কারো ভ্রু, পাতায় আঁকা বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি, যেমন— মোটরসাইকেল, সিগারে...
জাদুর পুকুর

জাদুর পুকুর

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
ওমর ফারুক আশরাফি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কুলিকুন্টা গ্রামটি শান্ত-নিবিড় প্রকৃতির এক অপূর্ব কোণে অবস্থিত। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে আছে প্রাচীন এক আমবাগান, আর সেই বাগানের পেছনে ছায়া ঢাকা একটি পুকুর। পুকুরটি ঘিরে ছড়িয়ে আছে বহু রহস্যময় গল্প ও লোককথা। সে পুকুরের পাশে দাঁড়ালে আজও যেন বাতাসে ভেসে আসে এক অতীতের গন্ধ, এক অদ্ভুত শিহরণ। পুকুরটির পাশেই রয়েছে ভূঁইয়া বাড়ি—একসময়ে যার নাম উচ্চারণেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়তো সম্মান আর গৌরব। বড়, প্রাচীন, দোতলা সেই বাড়িটি ছিল ধন-সম্পদ, আতিথেয়তা ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। নানুর মুখে শুনেছি, সেই বাড়িতে যখনই কোনো বিয়ের আয়োজন হতো, পুকুর থেকে স্বর্ণের থালা-বাটি ভেসে উঠতো। কেউ জানতো না ওগুলো কোথা থেকে আসে, কারা রেখে যায়, তবে সবাই জানতো—এটা ছিল এক আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ। ভূঁইয়া বাড়ির বড় ছেলে ছিলেন আভু ভূঁইয়া। সৌম্য চেহারা, দৃঢ়চেতা মন ও দরদভরা হ...
হেলদি ক্লাবের হুলস্থূল

হেলদি ক্লাবের হুলস্থূল

গল্প, সাহিত্য
জুয়েল আশরাফ : পদ্মপুর গ্রামের স্কুলে একটা আজব ক্লাব ছিল—'হেলদি ক্লাব'। এই ক্লাবের সদস্যরা ছিল বিশাল একদল দুষ্টু ছেলেমেয়ে, আর তাদের নেতা ছিল বোকা রাজু! রাজু মোটেও স্বাস্থ্য সচেতন ছিল না। ওর খাবারের লিস্টে থাকত—চিপস, চকোলেট, আইসক্রিম, আর কোল্ড ড্রিংকস। একদিন, হেডস্যার স্কুলের সব ছাত্রকে ডেকে বললেন, এবার থেকে স্কুলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য 'হেলদি ক্লাব' তৈরি করা হবে! ক্লাবের নেতা হবে রাজু! রাজুর চোয়াল ঝুলে গেল। ওর মাথায় শুধু চকোলেট ঘুরছিল, আর এখানে তাকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে? কিন্তু হেডস্যার আরও ঘোষণা দিলেন, যে দল সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করবে, তাদের জন্য থাকবে স্পেশাল পুরস্কার! এটা শুনেই রাজুর চোখ চকচক করে উঠল! রাজু ভাবল, পুরস্কার তো চাই, কিন্তু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন? নাহ, এটা কঠিন! তাই ও এক ধূর্ত বুদ্ধি আঁটল! ওর বন্ধুরা—সুমন, টুকুন, আর পল্টু সব...