Wednesday, October 1
Shadow

গল্প

সংক্ষিপ্ত কিন্তু হৃদয়ছোঁয়া গল্পের সমাহার। রহস্য, রোমাঞ্চ, প্রেম, মানবিকতা—বিভিন্ন স্বাদের বাংলা ছোটগল্প পড়ুন, অনুভব করুন নতুন গল্পের জগৎ।

আজকের রাতটা অন্যরকম

আজকের রাতটা অন্যরকম

গল্প, সাহিত্য
কুমার প্রীতীশ বল ক্ষাণিকক্ষণ আগে রাত্রি নেমেছে নগরের বুক জুড়ে। ব্যালকনির দোলনায় দুলতে দুলতে মনোযোগ দিয়ে নীরা ফাগুনের আকাশ দেখছেন। আকাশে তারারা জ¦ল-জ¦ল করছে। আইফোনের পাশে টি-টেবিলে অর্ধেকটা কফি তখনও বর্তমান। চারপাশ ঘিরে আছে এক নির্জনতা। ঘরের আলো, সংসারের কোলাহল-- সবই একঘেয়েমি লাগছে। আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার আকাশ ঘন হয়ে উঠছে। নীরার ভেতরের নির্জনতাটাও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। আজকের রাতটা কেন জানি অন্যরকম লাগছে তাঁর। মনে হয়, কোনো এক বিলুপ্ত নগরীর মতো। সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জেগে ওঠছে হৃদয়ে। নির্জনতাটা যখন স্বৈরাচারের হিংস্র থাবার মতো জাঁকিয়ে বসছে, তখন মিউট আইফোনের আলোটা জ¦লে ওঠে। ওয়াটসআপে অমিত লিখেছে, ‘ছাদে কেউ নেই। একবার আসবেন?’ এ-সময় নীরার ছাদে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তাই লিখলেন, ‘রাত্রি অনেক।’ সুনীল একটা ‘হাসির লিমুজি’ পাঠি...
মায়া

মায়া

গল্প, সাহিত্য
বি এম মিজানুর রহমান  বন্দে মায়া লাগাইছে, প্রীতি শিখাইছে দিওয়ানা বানাইছে... মোবাইলে গান শুনতে শুনতে রবি নের রোজ-এর কথা খুব মনে পড়ছে।হেড ফোন কানে স্মার্ট সিল্কি চুলের রবিনকে চাঁদনী রাতে গ্রামের মেঠো পথে অদ্ভুত লাগছিলো। টর্চ হাতে ট্রাউজার আর গেঞ্জি গায়ে বাদাম বিক্রেতার বেশে তাকে একদম বেমানান। শহুরে গন্ধ কি এতো সহজে শরীর থেকে চলে যায়।যদিও রবিন গ্রামে অভিযোজিত হওয়ার শতভাগ চেষ্টা করছে।কিন্তু ওলটপালট করে দিচ্ছে তাকে রোজ,হ্যা রোজ নামের মেয়েটির চোখে অদ্ভুত মায়া! আজ রোজ-দের বাড়িতে পিঠা বানানো হচ্ছে। এলাকার কিছু বিচ্ছু ছেলেমেয়ে আজ জড়ো হয়েছে রোজদের বাড়ি।পিকনিক, পিকনিক খেলা!চাঁদের আলোয় চাঁদের বুড়ি যেন নেই তিনি রোজ হয়ে রোজদের বাড়ির ফুলবাগানে ঘুরছে! আপনিও আসুন, রবিনকে রোজ বললো। মাঝ উঠোনে চোখ বেঁধে লুকোচুরি খেলা জমে উঠছে।রবিন যদি-ও খুব চিমটির শিকার হয়েছে তথাপি খুব এন...
প্রেমের মেঘে একটি মন

প্রেমের মেঘে একটি মন

গল্প, সাহিত্য
ওমর ফারুক আশরাফি ভালোবাসা—এটা কি কেবল দুজন মানুষের মধ্যকার সম্পর্কের গল্প? নাকি কখনো কখনো একা একজন মানুষের নিঃশব্দ অনুভবের দীর্ঘ একাকীত্ব? এখানে গল্পটা শুরু হয় এক মন থেকে, যে একা। কিন্তু একাকী নয়। সে ভালোবাসে—অতল গহিন থেকে ভালোবাসে এমন কাউকে, যার বাস্তব কোনো রূপ নেই। তবু তার কাছে সেই মানুষটির অস্তিত্ব গভীর, শক্ত, জীবনের প্রতিটি কোণায় ছায়ার মতো জড়ানো। এই ভালোবাসা দেখার মতো কিছু নয়। কেউ বাইরে থেকে তাকালে বুঝতে পারবে না—এই হৃদয়ে কতো কিছু জমে আছে। প্রতিদিন সে কিছু সময় নিজের মধ্যে ডুবে থাকে, নিজের সঙ্গে কথা বলে। সে অনুভব করে, তার কল্পনার সেই সাথী যেন ঠিক তার পাশেই বসে আছে—নীরবে, ধৈর্যে, গভীর সান্নিধ্যে। এই সম্পর্কের নেই কোনো সংলাপ, নেই কোনো চোখে চোখ রাখার মুহূর্ত, নেই কোনো বাস্তবতার সনদ। তবু সম্পর্কটি গভীর। কারণ, এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ হৃদয়ের ...
চিঠিতে লেখা ভালোবাসা

চিঠিতে লেখা ভালোবাসা

গল্প, সাহিত্য
একেএম নাজমুল আলম একপল্লবপুর গ্রামের শেষ মাথায় একচালা খড়ের ঘরে বাস মালতির। গরীব ঘরের মেয়ে, তবু চোখে তার স্বপ্নের দীপ্তি। পিতৃহীন সংসারে মা-ই তার পৃথিবী। স্কুলের গণ্ডি পার করার পর বইয়ের পাতায় মুখ না গুঁজে সে গুঁজে রেখেছিল মায়ের ঔষধের প্রেসক্রিপশন আর ভাতের মাপ। জীবন তার কাছে এক বিশাল যুদ্ধ, আর প্রতিদিন সকালটা যেন সেই যুদ্ধে অস্ত্র হাতে নামা। অন্যদিকে শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বাড়ি রাজীবের। ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের একমাত্র সন্তান। বিলাসী জীবনযাপন, বিদেশি গাড়ি, ঢাউস বাংলো, মুঠোফোনে লাখ টাকার খরচ। তবু তার ভিতরটা ছিল একা। বাবার ব্যস্ততা আর মায়ের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণের দায়ে সে হয়ে উঠেছিল নিঃসঙ্গ। দুইগল্পের শুরু এক সাদা খামে। মালতি প্রতি শুক্রবারে ডাকঘরের সামনে বসে চিঠি লিখত—তার কল্পনার এক ‘অচেনা বন্ধু’কে। সেখানে সে লিখত তার মন খারাপ, মা অসুস্থ, পড়াশোনার ইচ্ছে আর একদিন নিজের পায়ে দ...
তোমার অপেক্ষায় নাঈম

তোমার অপেক্ষায় নাঈম

গল্প, সাহিত্য
একেএম নাজমুল আলম  বর্ষার সন্ধ্যা। আকাশে গর্জে উঠছে মেঘ, ঝিরঝির করে পড়ছে বৃষ্টি। ঢাকার ব্যস্ত শহরের এক কোণে বসে নাঈম আজও অপেক্ষা করছে। প্রতিদিনের মতোই। হাতে একটা ছাতা, পাশে দু’কাপ কফি। ছয় বছর হয়ে গেল তৃণা নেই। সেই তৃণা, যার মুখ দেখে নাঈম প্রথম প্রেমে পড়েছিল। তৃণাকে প্রথম দেখেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। চোখে ভারি চশমা, কানে হেডফোন, হাতে একটা উপন্যাস — 'হুমায়ূন আহমেদের “নন্দিত নরকে”'। মেয়েটার চেহারার চেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছিল তার একাগ্রতা। কয়েকদিন পর সাহস করে পাশে বসেছিল নাঈম। – “হ্যালো! তুমি কী পড়ছো?” তৃণা তাকিয়েছিল এক ঝলক, হালকা হাসি দিয়ে বলেছিল, “তোমাকে পড়ছি না, সেটা নিশ্চিত।” এই শুরু। এরপর প্রেমটা জমে উঠতে সময় লাগেনি। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট, বইমেলা, লালবাগ কেল্লা, আজিমপুরের রিকশাভ্রমণ — সবখানেই ছিল তাদের গল্প। কিন্তু জীবন গল্পের মতো সহজ না। তৃণার...
অমর প্রেম

অমর প্রেম

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
সুমন বিপ্লব “আমাকে একটি কবিতা দিও।” একটি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে এলো কাজলের কানে। সে লজ্জায় পিছনে তাকাতে পারিনি। মনে মনে সে ভাবে কে এই মেয়েটা ? কি করে জানলো সে যে কবিতা লেখে ? মাত্র ৪ দিন সিলেটের আকিলপুর গ্রামে কাজের লোক হয়ে এসেছে। এ গ্রামের সাবেক মেম্বর মুক্তার আলী তাকে শাহজামাল (র.) মাজার থেকে নিয়ে এসেছেন। আকিলপুর আসার ৪র্থ দিন সন্ধ্যায় আনফর চাচা তাকে নিয়ে পাড়ায় এলো একটি বাড়িতে। তাদের বসতে দেওয়া হলো। একজন বয়স্ক লোককে চিনতে পানতে পারল। তিনি পূর্বের দিন কাজল যখন রানাদের বাড়িতে ছড়া পড়ে ছিল তিনি তখন বসে বসে ছড়াগুলো তিনি মনোযোগ সহকারে শুনেছিলেন। তিনি দুটি মেয়েকে দেখিয়ে বললেন, : এই আমার বড় মেয়ে নাম করুনা। শিক্ষকতা করে। ছোট মেয়ে হেনা। ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। কাজল মনে মনে ভাবল তার মত একজন সামান্য কাজের লোককে কেন তার মেয়েদের সাথে পরিচয় করে দিচ্ছে। চাচা একসময় বললেন, : তোমার ...
ভ্রান্তির সমীকরণ

ভ্রান্তির সমীকরণ

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
সাবরিনা তাহসিন একটা সামান্য ভুল! ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়।না জএনে কিছউ করা মানে ভুল। সব কিছু জেনে ভুল করলে সেটা ভুলের মাত্রা ছাড়িয়ে অন্যায়ে রূপ নেয়। অন্যায়ের প্রভাবে জন্ম নেয় ক্ষোভ ,ঘৃণা ,আক্রোশ । ফাটল ধরিয়ে দেয় সম্পর্কে।বন্ধুত্বের দেওয়ালে ভাঙ্গন ধরে। অলক ও বীণার বন্ধুত্ব অনেকদিনের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়।সেই বন্ধুত্বে কোনো কমতি ছিলো না। আলাপচারিতার ফাঁকফোঁকরে হাসি-ঠাট্টা ,তামাশা সবটাই চলতো।প্রযুক্তির সুবাদে আধুনিকত্বের ছোঁয়ায় প্রতিদিনই চলতো কথার আদান-প্রদান।বীণার মিসডকল ভোরবেলার পাখি হয়ে অলকের ঘুম ভাঙ্গায়।বীণা অলককে মানুষ হিসেবে যতোটুকু জানে , সব দিক থেকে ঠিকঠাক। কিন্তু , অলকের একটাই বদভ্যাস।কারণে -অকারণে সিগারেট না ধরালে চলেই না।বীণা অলককে ধূমপানের সুফল-কুফল সম্পর্কে বুঝায়।অলককে অনেকবার ধূমপান করতে বারণ করে।কিন্তু ,বারণ মানে কে! দেখতে দেখতে কীভাবে যেন দে...
 ফিরে যদি আসো একদিন 

 ফিরে যদি আসো একদিন 

গল্প, ফিচার, সাহিত্য
একেএম নাজমুল আলম  সামনে রাখা মোবাইল স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে শেষবার নীলাঞ্জনা পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ – “তুমি সব কিছুতেই তোমার কাজ, ভবিষ্যৎ আর স্বপ্ন নিয়ে এত ব্যস্ত, আমি কোথায় আছি সেটা কখনও ভেবেছো?” তারপর থেকে আর কোনো উত্তর নেই।  দুই বছর আগের গল্প সফল তখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র, অদম্য স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছে—নিজেকে একজন সফল এন্টারপ্রেনার বানাবে। আর ? তার ক্লাসমেট, তার বন্ধু, তার প্রেম—সবই একসাথে। কখনও গুলিস্তানের ফুটপাত ধরে হেঁটে চা খাওয়া, কখনও মোহাম্মদপুরের নদীর ধারে বসে শুধু চুপচাপ থাকা— সফলের জীবনে নীলাঞ্জনা ছিল একটি অনুভব, একটি সাহস, একটি ঘরের মতো নিরাপদ স্থান। কিন্তু সফল ছিল স্বপ্নপিপাসু— সে কাজ করত স্টার্টআপে, রাত জাগত, কোড লিখত, বিনিয়োগ খুঁজত, ভবিষ্যৎ বানাত। এবং একই সাথে দূরত্ব তৈরি করত।  নীলাঞ্জনা বলত, “ভালোবাসা মানে শুধু পা...
” চাঁদের প্রতিবন্ধী “

” চাঁদের প্রতিবন্ধী “

গল্প, সাহিত্য
এস এ বিপ্লব, নারায়ণগঞ্জ (১) সাজ রোজ সকালে কোচিং পড়তে যায়। আজ তার ব্যতিক্রম নয়।তবে কোচিং এ আজ ব্যতিক্রম ছিল। সেটা হলো আজ নতুন একটি মেয়ে এলো পড়তে যাকে এই প্রথম দেখলাম। টিচার আমাদের সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।মেয়ে টি এম এস এস পড়ছে সরকারি তোলারাম কলেজে। সাজ মনে মনে বলছে আমিও তো এই কলেজে পড়ি কিন্তু কখনো দেখিনি তো।মেয়ে : নিজের নাম বলল। সাজের পিছনের সিটে বসল। নাম শাহনাজ।পিছনে বসাতে তাকিয়ে দেখি এতো সুন্দর মেয়েটির চেহেরা যেন, চাঁদ।সাজ : তাই সাজ মনে মনে ঠিক করে ফেলে, মেয়ে টিকে চাঁদ বলেই ডাকবে। এরপর থেকে সাজ মেয়ে টিকে চাঁদ বলেই ডাকত। মেয়ে টিও কিছু বলত না। চাঁদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ নবীনগর এলাকাতে। (২) রমজান মাস তবুও কোচিং পড়তে যেতে হয়।আজ পড়া শেষে চাঁদ বলল সাজ ভাই আপনাকে কিন্তু এবারের ঈদে আমাদের বাসায় যেতে হবে।সাজ: ঈদ আসুক তো, আর বলেছ যখন যাবো। যদিও এক মাস যেতে আর কদিন।দেখতে দ...
তবুও তুমি এলে

তবুও তুমি এলে

গল্প, সাহিত্য
একেএম নাজমুল আলম  রাত দশটা পেরিয়েছে। কমলাপুর স্টেশন ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে আসছে। সিয়াম প্ল্যাটফর্মে এক কোণে বসে আছে—হাতে এক গ্লাস চা, চোখে বিরহের ছায়া। নীলার সঙ্গে তার শেষ দেখা আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে। একটি ভুল বোঝাবুঝি, একটি তিক্ত বাক্য, আর একরাশ অভিমান তাদের আলাদা করে দিয়েছিল। নীলা বলেছিল, “তুমি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসো, নাকি শুধু তোমার ইগোর অংশ আমি?” সিয়াম সেদিন চুপ ছিল। আর সেই চুপ থাকাই ছিল সবচেয়ে বড় উত্তর। নীলা চলে গিয়েছিল ঢাকা ছেড়ে—এক চিঠি রেখে, "যদি সত্যিই ভালোবাসো, একদিন ঠিক দেখা হবে।" সিয়াম আজও সেই চিঠি যত্ন করে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে পড়ে—চোখ ভিজে যায়। আজ হঠাৎ ফোনে একটা অজানা নম্বর থেকে এসেছিল এসএমএস: “শেষ ট্রেনটা রাত ১১:৪৫-এ ছাড়বে। আমি আসবো কিনা, জানি না। কিন্তু তুমিই বলেছিলে—শেষ সুযোগটা যেন আমি দেই।" সিয়াম জানে, এই ট্রেনটা নীলার শহর থেকে...