
পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, জীবন-জীবিকা রক্ষায় নদ-নদী বাঁচাতে হবে। নদী আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সেই নদীভাঙন, দখলে ও দূষণের শিকার। যে কারণে দেশে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। রবিবার সকালে খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের পাড়ে মানববন্ধন শেষে প্লাস্টিক বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সচেতন সংস্থার সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস। এ সময় বক্তৃতা করেন অধ্যাপক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, ইউপি সদস্য শঙ্কর বিশ্বাস, ডা. বাসুদেব রায়, অনির্বাণ লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত দেবনাথ, পরিবেশকর্মী আফজাল হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের রিয়াদ হোসেন প্রমুখ। মানববন্ধনে খুলনা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদী দ্রুত খনন এবং উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান বক্তারা। তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকিতে থাকা ওই অঞ্চলের মানুষের সীমাহীন সংকটের মুখোমুখি। এই সংকট মোকবেলায় মৃতপ্রায় নদীগুলো দ্রুত খনন করতে হবে। একই সঙ্গে উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। খুলনা-পাইকগাছা মহাসড়ক দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা। দুর্যোগকবলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদী খননে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, একসময় কপোতাক্ষ ও শিবসা নদীতে লঞ্চ, স্টিমার সহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করত। খুলনা ও সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের মানুষ নৌপথে সহজেই যাতায়াত করত। অথচ একসময়ের প্রবল খরস্রোতা নদী দুটি এখন পলি জমে ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে। আবার কপোতাক্ষ পাড়ের বিভিন্ন স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানিতে পাইকগাছা বাজার প্লাবিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নদীপাড়ের মানুষ দুর্যোগে-দুর্ভোগে জীবনযাপন করছে। জলাবদ্ধতার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে জীবিকা হারিয়ে অনেকেই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। বক্তারা বলেন, দেশের বেশির ভাগ নদী দখল-দূষণ, অবহেলা ও তীব্র নাব্যতাসংকটে বিপন্নপ্রায়। আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে ফারাক্কা বাঁধ ও তিস্তা ব্যারাজের মতো সমস্যা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাঝেমধ্যে অতিবর্ষণ ও ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানছে। তাই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলায় নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তারা আরো বলেন, ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সব নদ-নদী খনন করে গভীরতা বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।