বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে তথ্য বিভ্রান্তির মধ্যে দিয়ে ‘মধ্যম আয়ের ফাঁদে’ আটকে পড়েছে। এ দাবি করা হয়েছে দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে।
‘মধ্যম আয়ের ফাঁদ’ বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে একটি দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়, কিন্তু উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে ব্যর্থ হয়।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শ্বেতপত্র প্যানেলের অন্যতম সদস্য জাহিদ হোসেন বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম বাংলাদেশ এই ঝুঁকিতে আছে। এখন এটা বাস্তবে ঘটেছে। আমরা শ্বেতপত্রে ডেটার মাধ্যমে এটি ব্যাখ্যা করেছি।”
প্যানেলের প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
কীভাবে বাংলাদেশ এই ফাঁদে পড়ল?
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অবস্থার জন্য দায়ী হলো কাঠামোগত সংস্কারে স্থবিরতা, পূর্ববর্তী সংস্কার থেকে পিছিয়ে আসা, প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, বৈশ্বিক প্রতিকূলতা এবং নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধি ও বাস্তবতার মধ্যে বিরাট ফারাক।
এছাড়া, নিম্ন-উৎপাদনশীল কৃষি ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমে কর্মসংস্থান সীমাবদ্ধ থাকা, সম্পদের অপব্যবহার এবং অর্থনীতির প্রতিযোগিতা হারানোও কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাংক খাতের সংকট এবং তারল্য সংকটের মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
যুব বেকারত্ব এবং বিনিয়োগের সংকট
অপর্যাপ্ত অবকাঠামো উন্নয়ন, অদক্ষতা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যবসায়িক আস্থার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাধা দিচ্ছে।
তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, কারণ অর্থনীতি মানসম্মত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না।
বিশ্ব ব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী, মধ্যম আয়ের ফাঁদ হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে মধ্যম আয়ের দেশগুলো প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং মজুরির প্রতিযোগিতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
সমাধান কী?
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, এই ফাঁদ থেকে বের হতে হলে “টোটাল ফ্যাক্টর প্রোডাক্টিভিটি” বাড়াতে হবে। এর অর্থ, নির্দিষ্ট ইনপুট থেকে কীভাবে বেশি আউটপুট পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করা, বিশেষত শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মাধ্যমে।
শিক্ষা ও দক্ষতাই শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চাবিকাঠি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবেক বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “এই ফাঁদ থেকে বের হওয়ার তিনটি পথ রয়েছে: সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতি সংস্কার এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা। এর বাইরে কোনো পথ নেই।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি বাংলাদেশ এই ফাঁদে আটকে থাকে, তবে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিশ্বব্যাপী চিত্র
২০২৩ সালের শেষে, বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ১০৮টি দেশ, যার মধ্যে চীন, ব্রাজিল, তুরস্ক এবং ভারত অন্তর্ভুক্ত, মধ্যম আয়ের ফাঁদে আটকে ছিল। এই দেশগুলোতে ৬০০ কোটি মানুষের বসবাস।