
স্বপন বিশ্বাস, শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধিঃ মাগুরার শালিখা উপজেলায় অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের পানিতে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, পুকুর, মাছের ঘের,রাস্তা ঘাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থসেবা কেন্দ্র, বসত বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বিস্তৃত ফসলের মাঠ গুলো যেন সাগরের ঢেউ উঠে দোল খাচ্ছে।
এতে ধান, শাকসবজি এ মৌসুমের প্রায় সব ধরনের ফসল ও মাছের মারাত্মক ক্ষতির মুখে । এরপরও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে । ফলে আরও ক্ষতির আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন উপজেলার হাজার হাজার কৃষক ও মৎস্য চাষীরা ও সাধারন মানুষ।উপজেলার ৯৫ ভাগ আমন ধান লাগানোর কাজ শেষ হয়েে গিয়েছিল । কিছু জমি বাকি থাকলেও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ার কারণে আর রোপণ সম্ভব হবে না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে এবং বন্যার পানিতে অনেক জমিতেই ফসলের আর তেমন কোনো চিহ্ন নেই, চারদিকে শুধুই থইথই পানি। মনে হচ্ছে যেন বিস্তীর্ণ ফসলি জমি যেন সাগরে পরিণত হয়েছে।
একই সাথে দেখা যায়, চটকাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সেওজগাতি আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ধনেশ্বরগাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়,ধনেশ্বর গাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার পাশে পানি থৈথৈ করছে। পানি উঠে গেছে ধনেশ্বর গাতি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়া ধনেশ্বর গাতি, সেওজগাতি, চতিয়া,গোবিন্দ পুর,থৈ পাড়া,টিওরখালী,দীঘল গ্রামের শতাধিক বাড়িতে।
তালখড়ি গোবিন্দপুর সড়ক, টিওরখালী উজগ্রাম সড়ক ধনেশ্বর গাতি থৈ পাড়া সড়ক সহ অনেক সড়ক তলিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। শতখালী ইউনিয়নের শতখালী গ্রামের সরদার পাড়ার কৃষক মকবুল হোসেন জানান, তিনি প্রায় সাড়ে ৭বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলেন। এক মাসের পরিশ্রমের পর ধান গাছ বড় হয়ে গেলেও এখন সবই পানির নিচে। শুধু ফসলই নয়, ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষেও।
শালিখা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে প্রায় ২৭.৯ হেক্টর পুকুর ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। তালখড়ি গ্রামের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টি এবং বন্যার পানিতে পুকুর, মাছের ঘের এবং ফসিল জমি আমাদের সব শেষ! ’আমাদের এখন আর কোন ফসল নাই। শালিখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসনাত বলেন, উপজেলার প্রায় ২৫০হেক্টর জমিতে আমন ধান,১৬হেক্টর জমিতে সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।
তবে পানিতে ডুবে গেলেই সব ধান নষ্ট হবে তা নয়। যদি দ্রুত পানি সরে যায়, তাহলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে যাবে। তবে কিছু এলাকায় অন্যান্য ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পাশে আছি। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ধনেশ্বরগাতি ও তালখড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ সচেতন মানুষ মনে করেন, অপরিকল্পিত ব্রীজ নির্মাণ ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জল নিষ্কাশন মুখে ভেড়ি নির্মাণ এই বন্যার জন্য বেশি দায়ী। কারণ পানি প্রবাহে নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকদের দাবি বারগংগা খালের উজগ্রাম,সেওজগাতিও শ্মশানের নিকট নির্মিত তিনটি ব্রীজ কমপক্ষে চারগুণ বড় করে নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া খালের মুখের ভেড়ি বাঁধ অপসারণ করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে সমস্যা আরও প্রকট হবে।