Thursday, October 2
Shadow

সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের উপেক্ষা করে বর্ষপূর্তি উদযাপন: জবি প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়

রোকুনুজ্জামান, জবি প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা ও আহত শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে বর্ষপূর্তি উদযাপনের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনাসহ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ মাঠে আয়োজন করা হয় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি’ অনুষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যাঁরা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাঁরা আহত হয়েছেন বা সম্মুখ সারিতে ছিলেন, তাঁরা অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বাদ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জবির শিক্ষকদের মধ্যে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা পালন করে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা শাহ্ নিস্তার জাহান কবীরসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে অনুষ্ঠানে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অনেকেই মনে করছেন, আন্দোলনের প্রকৃত নেতৃত্ব ও ত্যাগের ইতিহাসকে উপেক্ষা করে এমন আয়োজন ‘লজ্জাজনক ও হতাশাজনক’।

মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লব এক বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হয় জুলাই আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে। জুলাইতে যারা ১দফা পর্যন্ত আন্দোলন করেছে সেই সকল যোদ্ধাদের বাদ দিয়ে কাদের নিয়ে আজকে উদযাপন করতিছেন? এরা কারা? জুলাইতে কোথায় ছিল এরা? কোন মুখে এরা এখানে বসেছে? লজ্জা লাগেনা জুলাইয়ের সাথে বেইমানি করতে? জুলাই উদযাপন কমিটির (নাম মেনশন দিলাম না) প্রতি ঘৃনা রইল।” 

ইসলামি ছাত্র আন্দোলন, জবি শাখা সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, “প্রশাসন থেকে আমাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করা হয়নি। শুধু আমার সাথে না আমার মনে হয় অনেক ছাত্র সংগঠন আছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করা হয়নি এবং সবচেয়ে বেশি মর্মাহত হয়েছি যারা প্রথম সারির জুলাই যোদ্ধা, মনে হয় না তারাও বিষয়গুলো জানে। এটা আসলে আমাদের জন্য একটা লজ্জার বিষয়। কি বলব এটা তো হচ্ছে আমাদের নিজেদের প্রশাসন এবং তারাই আমাদের সাথে এখন এরকম একটা বিচার করেছে। কারণ যে সকল ছাত্র সংগঠন জুলাই আন্দোলনে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছে তারাও জানে না। তাহলে আদতে উনারা হচ্ছে নিজেরা নিজেরা হচ্ছে পিকনিকের মত করে হচ্ছে একটা প্রোগ্রাম নামিয়ে করে ফেলছে।”

ছাত্রফ্রন্ট জবি শাখার সভাপতি ইভান তাহসিব বলেন, “৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন হলেও বর্ষপূর্তি আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মতামত না নিয়ে, সংগঠকদের উপেক্ষা করে একতরফাভাবে অনুষ্ঠান করা ইতিহাস বিকৃতির শামিল। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের জবাবদিহি দাবি করি। এখনো আহতদের সঠিক চিকিৎসা ও বিচার হয়নি এই প্রেক্ষাপটে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান নয়, বরং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ প্রয়োজন।” 

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জবি শাখার আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, “এই প্রোগ্রামের বিষয়ে আমাদের কিছুই অবহিত করা হয়নি। আমি মনি করি, জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জানানো উচিত ছিল। 

এবিষয়ে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “এটা হচ্ছে যে প্রশাসন একটা দুর্বলতা এটা স্বীকার করতে হবে এটা হচ্ছে। ওনাদেরকে স্বীকার করতে হবে এবং এটার দায়ভার নিতে হবে। তারা কেন এই কাজ করলো? নাকি এটাতে তাদের অন্য কোন স্বার্থ জড়িত? এক ইভেন্টে তারা চার পাঁচটা প্রোগ্রাম নামাচ্ছে সেটাও হচ্ছে একটা প্রশ্নের উদ্বেগ করে। শুধু রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোই নয়, যারা সাধারণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছিলো তাদেরকেও জানানো হয়নি। বিষয়টি উদ্বেগজনক। 

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, “আমরা একটি কমিটি গঠন করেছিলাম, যারা যাচাই-বাছাই করে অনুষ্ঠানটি কীভাবে করা হবে, তা নির্ধারণ করেছে। এই প্রক্রিয়ায় সবার অবদানকে মূল্যায়ন করে সম্মান জানানো হয়েছে। আমাদের সবার উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, কিছু প্রশ্ন উঠেছে- যাচাই-বাছাই কীভাবে হলো, কে বা কারা করল, এবং কেন যারা আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা বাদ পড়লো? আমরা মনে করি, এ নিয়ে অতিরিক্ত কথা বলা এখন যুক্তিযুক্ত নয়। বাস্তবতা হলো, একটি কমিটি ছিল, যারা বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শহীদ সাজিদের পরিবারকে যথাযথ সম্মান প্রদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে। আমরা সাজিদের মায়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেছি- এটা আমাদের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। হয়তো আরও কিছু করা যেত, সুযোগ থাকলে ভবিষ্যতে তা করবো ইনশাআল্লাহ।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *