Thursday, September 18
Shadow

যশোরের নওয়াপাড়ায় জনি চক্রের ভয়ংকর তাণ্ডব! 

­যশোর প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার (৩০ জুলাই) অভয়নগর থানায় ও গতকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) আর্মি ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী মোছা. আসমা খাতুন। তবে থানায় অভিযোগ না নেওয়ার কথা জানান তিনি।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহনেওয়াজ কবীর টিপু, তিনি নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। অপর দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির (পদ স্থগিত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।

অভিযোগে জানা গেছে, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালে শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে সুকৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামের এক ব্যক্তি। এ সময় জনি তাঁকে মারধর করেন এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন।

এরপর টিপুর স্ত্রী সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামান জনির প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) করেন। টাকা পেয়ে ওই দিন টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেট পার হলে সৈকত হোসেন হিরা তাঁর গতি রোধ করেন।

এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত টিপুর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জানতে পারেন, টিপুকে বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির মালিকানাধীন কণা ইকোপার্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টিপুর স্ত্রী সেখানে গেলে আসাদুজ্জামান জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে বাদীকে মারধর করেন এবং বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুচাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করেন।

এ সময় টিপু বাধ্য হয়ে তাঁর ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর ম্যানেজার প্রেসক্লাবের সম্পাদক মফিজের অ্যাকাউন্টে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (RTGS) করেন।

এ সময় মফিজুর আরও এক কোটি টাকার চেক আদায় করেন। পাশাপাশি জনির নামে ক্রয় করা তিনটি ও দিলীপ শাহার নামে ক্রয় করা তিনটি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এরপর কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেন।

জানতে চাইলে বাদী আসমা খাতুন বলেন, ‘দুই দফায় আমার কাছ থেকে চার কোটি টাকা নিয়েছে জনি। এত দিন নিরাপত্তার কারণে অভিযোগ দিইনি। এখন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। তাই আমি সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। পরক্ষণে পৌর বিএনপির (বহিষ্কৃত) সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে এখন আমাদের কেউ না। ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা আদায় সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই। তার কর্মকাণ্ডে আমাদের দল কোনো দায় নেবে না।’

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, ‘একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তবে আপনি ব্যবসায়ী টিপুর স্ত্রীকে বলেন, থানায় অভিযোগ দিতে। অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান জনির ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে নিজের ব্যবহৃত ফেসবুক একাউন্টে লেখেন, ‘বুকে হাত দিয়ে শপথ করে বলছি, আমি সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিশোধ নেবই নেব। আমার সৃষ্টি এক দিনে না, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার পর আজ আমার এই পরিচিতি, কেউ চাইলে কাচের টুকরার মতো ভেঙে ফেলতে চাইবে, আর আমি সেটা নীরবে মাথা পেতে নেব, এমনটা আমিও নই। ৫ তারিখের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে! আমি ওয়াদা করছি সকল ষড়যন্ত্রকারীর শিকড় পর্যন্ত উপড়ে ফেলব ইনশা আল্লাহ। আমার রাজনৈতিক সকল সহযোদ্ধার নিকট আমার একটাই ম্যাসেজ, কেউ অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবে না। সব সময় সততার সহিত বুকের সিনা টান টান করে সামনের দিকে এগোতে থাকো। নিশ্চয়ই আমরা একদিন আমাদের সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাব এবং সকল বাজে মন্তব্যকে পেছনে ফেলে আল্লাহ ভরসা। সবশেষে, ইট মারলে পাটকেলটি তাকে খেতেই হবে, যদি সেই পর্যন্ত আমার হায়াত থাকে, আমিন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *