Thursday, September 18
Shadow

নাসির নগর উপজেলার প্রাণ পুরুষ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম বাঙালি মুসলিম ব্যারিষ্টার আব্দুর রসুল

খ. ম. জায়েদ হোসেন, নাসির নগর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া


(১৮৭২-১৯১৭) আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। তিনি ১৮৭২ সালের ১০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গুনিয়াউক গ্রামের এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুর রসুলের পিতা মৌলভী গোলাম রসুল ও পিতামহ মৌলভী গোলাম আলী উভয়েই গুনিয়াউকের প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন।
শৈশবেই আবদুর রসুল পিতৃহারা হন। কিন্তু তার মাতা লংজান বিবি তাকে অত্যন্ত সফলভাবে গড়ে তোলেন। গৃহ শিক্ষক মহেশ চৌধুরীর কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা গভর্নমেন্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং এ স্কুল থেকে তিনি ১৮৮৮ সালে এন্ট্রাস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ১৮৮৮ সালেই বিলাত যান। আবদুর রসুল ১৮৯৬ সালে বি.এ এবং ১৮৯৮ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। আবদুর রসুল ১৮৯৮ সালে ইংল্যান্ডের মিডল টেম্পল থেকে ব্যারিস্টারি পাশ করেন এবং বি.সি.এল. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বাঙালি বি.সি.এল। লন্ডনে অবস্থানকালে খ্যাতনামা ভারতীয়দের সাথে তার পরিচয় ঘটে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আলী ইমাম, সৈয়দ হাসান ইমাম ও অরবিন্দ ঘোষ। উচ্চ শিক্ষা লাভের পর আবদুর রসুল ১৮৯৮ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। একই সঙ্গে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের অবৈতনিক লেকচারার হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন। আবদুর রসুল বাংলার জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিলের (১৯০৫) প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন।

রাজনীতি ক্ষেত্রে আবদুর রসুল স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর অনুসারী ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন। তিনি হিন্দু মুসলিম ঐক্য ও স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সূত্র ধরে। তিনি বঙ্গবিভাগের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এ কারণে তিনি একসময় বাংলার মুসলিমদের কাছে অপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার জনকল্যাণমূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে তিনি মুসলিমদের মন জয় করতে সক্ষম হন। তিনি ১৯০৬ সালে বরিশালে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। তিনি আবদুল হালিম গজনবী, আবুল কাসেম ও মুজিবুর রহমানের সহযোগিতায় ১৯০৬ সালে সাপ্তাহিক মুসলমান পত্রিকা প্রকাশ করেন। মুসলিম সমাজের এ পত্রিকা ছিল আবদুর রসুলের একটি বড় অবদান। ১৯০৭ সালে কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, দারভাঙ্গার মহারাজা আমীর হোসেন, আশুতোষ চৌধুরী, নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে আবদুর রসুল বড় লাট লর্ড মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং হিন্দু মুসলিমদের সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি স্থাপনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন (১৫ মার্চ, ১৯০৭)। তিনি ১৯০৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত সম্মানজনক উপাধিসমূহ প্রত্যাখ্যান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। ১৯০৯ সালে আবদুর রসুল বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং অনেক বছর এ দলের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

আবদুর রসুল ১৯১২ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি ১৯১৪ সালে চবিবশ পরগনায় অনুষ্ঠিত চবিবশ পরগনা মুসলিম লীগ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল তারিখে বর্ধমানে অনুষ্ঠিত বঙ্গ প্রেসিডেন্সি মুসলিম লীগের দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনেও আবদুর রসুল সভাপতিত্ব করেন। তিনি ১৯১৬ সালে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার মুসলিম নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে বহাল ছিলেন। ১৯১৬ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কলকাতা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯১৭ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯১৭ সালের ৩১ জুলাই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *