
সমুদ্রের ১০ হাজার মিটার নিচে পানির অকল্পনীয় চাপের ভেতরও বসেছে প্রাণের অভাবনীয় মেলা। সেই সমাজে যাদের বাস, তারা পায় না সূর্যালোকের দেখা। অন্ধকারাচ্ছন্ন ওই চরম পরিবেশে টিকে থাকতে তাদের বেছে নিতে হয় বিকল্প। চীনের একদল গবেষক তেমনই এক দল সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান পেলেন, যারা তাদের শক্তির জন্য পুরোপুরি নির্ভর করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ওপর। বুধবার বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার-এ প্রকাশ হলো এই গবেষণার বিস্তারিত।
চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে থাকা ইনস্টিটিউট অব ডিপ-সি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর গবেষকরা চালিয়েছেন এ পরীক্ষা। বিশ্বের গভীরতম বাসিন্দা কেমোসিন্থেটিক গোত্রের যে প্রাণীগুলোর সন্ধান পেলেন গবেষকরা, সেগুলো মূলত ভূতাত্ত্বিক তরলে মিশে থাকা আমাদের পরিচিত কিছু রাসায়নিকের পারস্পরিক বিক্রিয়া থেকেই শক্তি অর্জন করে।
মূলত টিউব ওয়ার্ম এবং বাইভালভ মোলাস্কের সমন্বয়ে গঠিত এই সমৃদ্ধ বাস্তুসংস্থান টিকে থাকে হাইড্রোজেন সালফাইড ও মিথেন সমৃদ্ধ তরল গ্রহণ করে।
এ গবেষণা চালাতে চীনের তৈরি মনুষ্যবাহী ডুবোজাহাজ ফেনতৌচ্যতে চড়েই গভীর সমুদ্রে ঢুঁ মারেন গবেষকরা। বিজ্ঞানী দলটি ৯,৫৩৩ কিলোমিটারের রেকর্ড গভীরতায় পৌঁছে কুরিল-কামচাটকা এবং আলেউটিয়ান পরিখার আড়াই কিলোমিটার ব্যাপী ছড়ানো তলদেশ অনুসন্ধান করেছে।
ভূ-রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই পরিবেশে পলি স্তরের গভীরে থাকা অণুজীবের কারণে তৈরি হয় মিথেন। এটি সমুদ্রের তলদেশের একটি বিশাল জৈবিকভাবে সক্রিয় এলাকা থাকার ইঙ্গিতও দেয়।
আগে ধারণা করা হতো এত গভীরে থাকা বাস্তুতন্ত্রটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ডুবে যাওয়া নানা জৈব কণা খেয়ে টিকে থাকে। নতুন আবিষ্কারের ফলে দেখা গেল, গভীর সমুদ্রের কার্বন চক্রের জটিল প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি বুঝতে হলে দরকার আরও কিছু নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
গবেষকরা বলছেন, কেমোসিন্থেটিক জীবগুলো গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের গঠন এবং বিশ্বব্যাপী কার্বন চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
সূত্র: সিএমজি বাংলা