Friday, September 19
Shadow

গল্পের নাম: “শেষ ট্রেনটা যখন ছাড়ে”

এ. কে. এম. নাজমুল আলম : ভালোবাসা সবসময় চিৎকার করে আসে না, কখনো কখনো চলে যায়— একদম শব্দ না করে…”

নিরা ট্রেন ধরতে দৌড়াচ্ছিল। চোখে-মুখে ক্লান্তি, হাতে ভারি ব্যাগ, মনে একরাশ অভিমান।

একটা ব্যর্থ সম্পর্কের শেষ ছুঁয়ে ফেরা কেউ আর কি-ই বা নিয়ে ফেরে?

ঠিক তখনই ধাক্কা খেয়ে পড়লো।

একটা হাত তাকে টেনে ধরলো।

“সাবধান! ট্রেন তো থামেই না, মন ভাঙা মানুষ তো আরও তাড়াতাড়ি পড়ে যায়!”

বললো ছেলেটা, মুখে হালকা হাসি, চোখে গভীর বিষাদ।

ছেলেটার নাম ছিল নাঈম

পাশাপাশি বসা দুই অচেনা মানুষ— কিন্তু ট্রেন যতদূর যাচ্ছিল, তাদের মধ্যকার দূরত্ব যেন কমে আসছিল।

নিরা কথা বলতো কম, কিন্তু নাঈম কথা কমানো জানতো।

সে বললো, “তোমার চোখে অভিমান, আর আমার জীবনে আফসোস—এই ট্রেন আমাদের ঠিকঠাক একসাথে এনেছে মনে হয়।”

নিরা একটু হেসে বললো, “তুমি কবি না অভিনেতা?”

“আমি আসলে হেরে যাওয়া মানুষ—তবে এখনো গল্প লিখি।”

নিরা এবার চুপ। এই প্রথম কাউকে নিজের কষ্টে নীরব সান্ত্বনা দিতে দেখছে।

অন্যরকম সকাল দুজনেই নামলো শেষ স্টেশনে—সিলেট।

নাঈম বললো,

“কোথাও যাওয়ার ঠিকানা না থাকলে আমার সঙ্গে চলো, চা খাওয়াই।”

নিরা অবাক হলেও সম্মতি দিলো।

সেই চায়ের দোকানে চায়ের কাপের পাশে দুইজন নিজেদের জীবনের ভাঙা ভাঙা অংশগুলো জোড়া লাগানোর গল্প করলো।

একটা কাপ চা, একটা বিকেল, আর দুইটা মন—যারা ধীরে ধীরে জোড়া লাগছিল।

প্রেম নাকি পুনর্জন্ম সিলেটে তিনদিন কেটে গেলো।

নাঈম বললো,

“এই সময়টুকু আমি কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না, কিন্তু আমি চাই তুমি থাকো।”

নিরা জানতো, প্রেম প্রতিশ্রুতির চেয়ে সাহস চায় বেশি।

সে রয়ে গেলো।

আজ দুই বছর পর, নিরা আর ঈশান আবার সেই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে।

নতুন একটা ট্রেন ধরবে। গন্তব্য এইবার জানা—ঢাকা নয়, একসাথে থাকা।

নিরা বললো “শেষ ট্রেনটা যখন ধরেছিলাম, ভাবিনি নতুন জীবন শুরু হবে।”

নাঈম হেসে বললো, সব শেষ ট্রেনই শেষ নয়। কিছু ট্রেন ভালোবাসার প্রথম গন্তব্য হয়।”

এই গল্প শুধু একটি প্রেমের নয়—এটি হারিয়ে যাওয়া থেকে ফিরে আসার, ক্ষত থেকে প্রেম জন্ম নেওয়ার এক নিঃশব্দ, সাহসী অভিযাত্রা। এটি মনে করিয়ে দেবে—প্রেম সবসময় আসে ফুলের মতো নয়, আসে ভাঙা মন নিয়ে, কিন্তু ঠিক মানুষ হলে তা মহীরুহ হয়ে ওঠে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *