
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় চলমান হামলার মধ্যে রবিবার থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। এই বিরতির উদ্দেশ্য ছিল ‘মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা’—যেমন চিকিৎসা সহায়তা, খাদ্য ও পানি বিতরণ, এবং আশ্রয়প্রার্থীদের চলাচলের সুযোগ দেওয়া। তবে এই ঘোষিত ‘কৌশলগত বিরতি’ বাস্তবে কোনো ধরনের মানবিক স্বস্তি নিয়ে আসেনি।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা প্রতিদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা (গ্রিনিচ সময় ০৭:০০ থেকে ১৭:০০ পর্যন্ত) গাজার তিনটি অঞ্চলে—আল–মাওয়াসি, দেইর আল–বালাহ এবং গাজা সিটি—লড়াই বন্ধ রাখবে। এই বিরতিকে তারা বলছে “ট্যাকটিক্যাল পজ” বা কৌশলগত বিরতি।
এই বিরতির ঘোষণার মধ্যেই রবিবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো টানা হামলায় কমপক্ষে ৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও ৬ জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছেন। গাজায় খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চরম সংকটে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হচ্ছে।
এদিকে, গাজায় সাহায্য পৌঁছাতে গিয়ে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’র ‘হানদাল্লা’ নামক জাহাজকে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী।
জাহাজটি গাজার উপকূলের দিকে এগিয়ে গেলে সেটিকে মাঝপথে থামিয়ে ২১ জন ক্রু সদস্যকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাহাজটি ছিল গাজার ওপর থেকে দীর্ঘদিনের অবরোধ ভাঙার প্রতীকী উদ্যোগের অংশ। এই ধরনের অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সমর্থিত হয়ে থাকে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৯,৭৩৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন আরও ১,৪৪,৪৭৭ জন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। অনেক পরিবার পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ১,১৩৯ জন নিহত হয়েছিলেন এবং ২০০–এরও বেশি মানুষকে হামাস জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল, যাদের অনেকেই এখনও ফিরে আসেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘কৌশলগত বিরতি’র নামে ইসরায়েল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে আগের মতোই। মানুষ যখন বিরতির সময় তাদের ঘর থেকে বের হয়ে খাদ্য ও পানি সংগ্রহ করতে চায়, তখনই বিমান হামলা বা ড্রোন আক্রমণের শিকার হচ্ছে। ফলে গাজার নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
গাজায় বহু এলাকা এখনও অবরুদ্ধ, যেখানে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে, হাসপাতালগুলো কার্যত অচল।
আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের এই ঘোষিত যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতোমধ্যে অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
তবে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান থেকে সরার কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। ফলে গাজার জনগণের জন্য ‘কৌশলগত বিরতি’ নয়, যুদ্ধই হয়ে উঠেছে প্রতিদিনের বাস্তবতা।