
‘রেফারেন্স লেটার’ বা সুপারিশপত্র বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদনর জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাগজপত্র। বিশেষ করে যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে চান, তাদের জন্য এটি আরও জরুরি। বিশ্বের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ই আবেদনের সময় কমপক্ষে দুটি রেফারেন্স লেটার চায়। এবার জেনে নেওয়া যাক— রেফারেন্স লেটার কী, এতে কী লেখা হয় এবং কীভাবে এটি প্রস্তুত ও জমা দিতে হয়।
রেফারেন্স লেটার কী?
রেফারেন্স লেটার বা সুপারিশপত্র মূলত হচ্ছে একজন ব্যক্তির দক্ষতা, চারিত্রিক গুণাবলি এবং কর্মক্ষমতার বিবরণ সংবলিত একটি চিঠি, যা সাধারণত তৃতীয় কোনো ব্যক্তি লিখে থাকেন। এই লেখককে বলা হয় ‘রেফারি’। তিনি হতে পারেন— আপনার শিক্ষক, অধ্যাপক, সুপারভাইজার, বস বা যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি আপনার সঙ্গে কাজ করেছেন বা আপনাকে ভালোভাবে চেনেন।
এই সুপারিশপত্র বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা চাকরির আবেদন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রেফারেন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা পায়।
রেফারেন্স লেটারে কী লেখা থাকে?
রেফারেন্স লেটারে আপনার ইতিবাচক গুণাবলির পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ থাকে। তবে এখানেও কৌশল রয়েছে— দুর্বলতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে সেটাই একরকম ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। যেমন, রেফারি লিখতে পারেন:
“ওর সবকিছুই ভালো, তবে কাজের ক্ষেত্রে একটু খুঁতখুঁতে, তাই কাজ শেষ করতে সময় নেয়।”
অথবা
“সে জয়ের এতটাই পাগল যে সহজে পরাজয় মেনে নিতে পারে না।”
এই ধরনের বক্তব্যে আসলে রেফারির পক্ষ থেকে আপনার প্রতি ইতিবাচক মনোভাবই প্রকাশ পায়।
রেফারেন্স লেটারের গঠন ও অংশভাগ
রেফারেন্স লেটার সাধারণত চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে থাকে—
১. পরিচিতি:
এই অংশে রেফারি লিখবেন, তিনি আপনাকে কতদিন ধরে, কীভাবে এবং কোন প্রসঙ্গে চেনেন। যদি শিক্ষক হন, তাহলে উল্লেখ করবেন— বহু শিক্ষার্থীর মধ্যে আপনি কেন আলাদা ও স্মরণীয়।
২. গুণাবলি ও দক্ষতা:
এখানে রেফারি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ইত্যাদির বর্ণনা দেবেন। আপনি যদি রিসার্চ কোর্সে আবেদন করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার গবেষণা সংক্রান্ত যোগ্যতা নিয়েও কিছু কথা থাকবে।
৩. সীমাবদ্ধতা (ইতিবাচকভাবে):
আপনার এক-দুটি দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হতে পারে, তবে তা যেন নৈতিক বা দায়িত্বশীল ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়।
৪. সুপারিশ:
সবশেষে, রেফারি আপনাকে নির্দিষ্ট কোর্স/প্রোগ্রাম/পদের জন্য জোরালোভাবে সুপারিশ করবেন।
রেফারেন্স লেটার জমা দেওয়ার পদ্ধতি
রেফারেন্স লেটার জমা দেওয়ার নিয়ম নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কলারশিপ কমিটির নির্দেশনার ওপর। তারা যদি চায় যে আবেদনকারী নিজেই চিঠিটি আপলোড করবে, তাহলে রেফারি কর্তৃক স্বাক্ষর করা স্ক্যান কপি সংরক্ষণ করে রাখুন।
তবে অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি রেফারির সঙ্গে যোগাযোগ করে ই-মেইলের মাধ্যমে রেফারেন্স চেয়ে নেয়। সেক্ষেত্রে আবেদনের সময় আপনাকে শুধু রেফারির নাম, পদবি, অফিসিয়াল ই-মেইল ও ফোন নম্বর দিতে হবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- রেফারির ই-মেইল অবশ্যই অফিশিয়াল ডোমেইনে (যেমন: .edu, .ac, .org) হতে হবে। জিমেইল বা ইয়াহু ব্যবহার করে থাকলে তাকে রেফারি না করাই ভালো।
- রেফারেন্স জমা দেওয়ার পর রেফারিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলবেন না।
- আপনার নিজের একটি সিভি বা রিজিউমে রেফারিকে দিয়ে রাখুন, যাতে তিনি আপনাকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরতে পারেন।
- আপনি যদি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন, তাহলে বিভিন্ন রেফারিকে ব্যবহার করুন, যাতে একজনকে বারবার বিরক্ত না করতে হয়।
- কখনো কখনো টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টরাও উপযুক্ত রেফারি হতে পারেন, বিশেষ করে যদি তারা আপনাকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনেন।
বিদেশে উচ্চশিক্ষা পেতে শুধু ভালো ফলাফল নয়, সুগঠিত ও শক্তিশালী রেফারেন্স লেটারও বড় ভূমিকা রাখে। তাই রেফারি নির্বাচন এবং রেফারেন্স প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সচেতনতা ও কৌশল বজায় রাখা জরুরি।