Saturday, July 19
Shadow

জাতির উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন – জবির নবীন বরণে মির্জা গালিব

রোকুনুজ্জামান, জবি প্রতিনিধি:

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. মির্জা গালিব বলেছেন, “একটি জাতির উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। একজন বাংলায় কথা বলে না পাহাড়ি ভাষায় কথা বলে, হিন্দু না মুসলমান এটা কোনো বিষয় না। নাগরিক ও ছাত্র হিসেবে সকলের অধিকার সংরক্ষিত থাকবে। এই রকম একটি সামাজিক চুক্তিতে আমাদের যেতে হবে। রাজনীতিকে পেশিশক্তির সংস্কৃতির কুৎসিততা থেকে মুক্ত করতে হবে।”

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শাখা ইসলামী ছাত্র শিবির কর্তৃক আয়োজিত নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে এসব বলেন তিনি। 

মির্জা গালিব বলেন, রাজনীতির জন্য পেশিশক্তি দিয়ে কাউকে হেনস্তা করা ঠিক নয়। একটি কালেক্টিভ জাতি গঠন করতে হবে। যারা দেশের প্রয়োজনে কাজ করবে। জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে। তবেই একটি উন্নত জাতি, দেশ গড়তে এই ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবর্তনের আাকাঙ্খা রয়েছে। এই আকাঙ্খা পূরণে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তরুনদের স্কিলড ম্যানপাওয়ারে পরিণত করতে হবে। রাজনৈতিক সচেতন এবং টেকনোলজিক্যাল প্রতিযোগিতায় যুগোপযোগী হতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর একটি অর্জন অন্য একটি অর্জনের পথ খুলে দেয়। কোনো অর্জনের পর অতি উৎসাহী না হয়ে পরবর্তী অর্জনের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখি সেখনে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী কম। বিশ্ববিদ্যালয় মানুষ তৈরির কারখানা হওয়া উচিত। কিন্তু এখানে তা হয় না। 

তিনি আরও বলেন, যে রাষ্ট্রের সংবিধান একটি দ্বন্ধের উপর প্রতিষ্ঠিত তা দিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতি পাওয়া যায় না। গালাগালিকে গলাগলিতে রুপান্তরের রাজনীতি তুলে ধরতে চায় ছাত্র শিবির। ছাত্র রাজনীতি হবে ভাবিষতে এ জাতির নেতৃত্ব প্রদানের। বাংলাদেশ হলো একটি সুন্দর একটা বাগান, যেখানে কোনো মালি নাই। এই তরুণ সমাজ সৎ, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ হবে। যারা দেশ পরিচালনা করবে।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর পল্টন থানার আমীর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি শাহীন আহমেদ খান বলেন, “আমরা মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

ঢাকা দক্ষিণ জামায়তে ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাইদি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার খরচের বর অংশ রাষ্ট্র খরচ করে। এই টাকা একজন রিকশাচালক, দিনমজুরের টাকা। তাদের আয়ের একটা অংশ আমাদের পড়ালেখার পিছনে ব্যয় হয়।৷ তাই তাদেরকে যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে। সুশিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে হবে। আমাদের উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো রেজাউল করিম বলেন,আমরা সকল ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে শুরু করেছি।আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। ছাত্রশিবির আজকে যেই উদ্যোগ নিয়েছে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনকে এরকম কার্যক্রম আয়োজনের আহ্বান জানাই।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শাখা শিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, ছাত্র হল প্রোভোস্ট-১ ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও শাখা শিবিরের অন্যান্য নেতৃত্বসহ নবীন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির আয়োজিত নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে কবি আল মাহমুদের কবিতা আবৃত্তি করেছেন এক ছাত্রী। কবিতা আবৃত্তি করা জয়নাব হাসান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। 

নৃবিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রী জয়নাব হাসান বলেন, “আজকে আমার এই প্রোগ্রামে আসার মূল কারণ হলো ড. মির্জা গালিব। আমি ব্যক্তিগতভাবে গালিব ভাইকে খুব বেশি অনুসরণ করি। মির্জা গালিব ভাই বলে গেছেন একটু আগে, আমাদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আমি নিজেও তাই মনে করি। মির্জা গালিব ভাইয়ের সাথে স্টেজ শেয়ার করতে পারাটা আজকে আমার জীবনে অনেক বেশি গর্বের বলে মনে করি।”

জয়নাব হাসান আরও বলেন, ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনা পালিযে গেল, তখন আমার কবি আল মাহমুদের বখতিয়ারের ঘোড়া কবিতার একটা লাইন বেশি মনে পড়ছিল, “দ্যাখো দ্যাখো, জালিম পালায় খিড়কি দিয়ে’। আমার মনে হয়, কবি আর মাহমুদ অনেক বছর আগে বলে দিয়েছেন, জালিমরা কীভাবে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।”

এই সময় ছাত্রী জয়নাব কবি আল মাহমুদের “আমাদের মিছিল’ কবিতা আবৃত্তি করেন। এ সময় নবীন শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ ও করতালির মাধ্যমে উৎসাহ দেন এই ছাত্রীকে।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। আরও বক্তব্য ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ বিলাল হোসাইন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে ২ হাজার নবীন শিক্ষার্থীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *