Monday, June 30
Shadow

গাছের বন্ধু আরিফুর

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

গাছ কেনা ভালোবাসে। কিন্ত গাছের প্র্রতি তার ভালোবাসাটা একটু অন্যরকম। সবার চাইতে আলাদা। তিনি শুধু গাছ লাগানই না। গাছের পরিচর্যা করেন। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন তিনি এক সবুজের অপূর্ব সমারোহ। গাছগ্রাণ এই মানুষটির নাম আরিফুর রহমান। নওগাঁর মহাদেবপুরে রাইগাঁ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। এ পর্যন্ত তিনি এক হাজার তালগাছসহ বিভিন্ন প্র্রজাতির সব মিলিয়ে ৫০ হাজারের ও বেশী গাছ রোপন করেছেন। গাছগুলো ফল,ফুল দিচ্ছে। তালগাছগুলো বজ্রপাতে মৃত্যু হার কমাচ্ছে। গাছের ছায়া পথিকের বিশ্রামের জায়গায় পরিনত হয়েছে। এ সব কিছুতেই আরিফুরের পরম সুখ।

আরিফুলের গাছ রোপনের শুরুটা সেই ছাত্রজীবন থেকেই। প্রায় ৪০ বছর আগে ছাত্রজীবনে নিজ গ্রামের কয়েকজন বন্ধু মিলে ইউনিয়নের বহুতি গ্রাম থেকে নিজ গ্রাম শহরাই হয়ে ডাবরকুড়ি পর্যন্ত- প্রায় ১ হাজার তাল গাছ রোপণ করেছিলেন। যা বর্তমানে তাল পার্ক নামে পরিচিত। শুরুতে মানুষজন নানা কথা বলতো। উপহাস করতো। কিন্ত আরিফুর একদমই এসব পাত্তা দেননি। তিনি নিজ খরচে বিভিন্ন রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানে ফুল, ফল, বনজ, ঔষধিসহ নানা প্রজাতির গাছ রোপণ অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বৃক্ষপ্রেমিক মানুষটি নিজ এলাকায় সবুজের ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত।

বদলগাছীর শেষ প্রান্ত থেকে মাতাজী হয়ে নজিপুরের শুরু পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৩ হাজার রঙিন ফুলের বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছেন। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জাকারান্ডা, পলাশ, কদম, টগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যা বর্তমানে শোভাবর্ধন করছে। এছাড়া রাইগাঁ ইউনিয়নের প্রতিটি সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, খাস জায়গা, কাঁচা-পাকা রাস-ার দুই পাশসহ মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শশ্মানঘাট, স্কুল, কলেজ এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজার বৃক্ষরোপন করেছেন। যা এখনও চলমান রয়েছে। আরিফুর বলেন আমি চেয়েছি সব প্র্রতিষ্ঠান সেটা শিড়্গা,ধর্মীয় যাই হোক। সব জায়গায় একটি হলেও আমার লাগানো গাছ থাকে।

গাছ পরিবেশ বাঁচায়। মানুষের উপকারী বন্ধু। তাই গাছ লাগানোর বিকল্প কিছু নেই। এই ভাবনা তাকে গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেছে সব সময়। নিজের পকেটের টাকা,সময় ব্যয় করে গাছের জন্য ছুটে গেছেন নানা জায়গায়। এ এক তার বিরামহীন চেস্টা। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধি। ছাত্র গড়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজও সামাল দেন দক্ষ হাতে। তবে এসব সব কিছু ছাপিয়ে তার গাছপ্রেমী পরিচয়টাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। আরিফুরের এই গাছ লাগানোর উদ্যোগ সর্ব মহলে ব্যাপকভাবে প্র্রশংসিত হয়েছে। তার নেতুত্বে রাইগা ইউনিয়ন এখন সবুজের এক অফুরন্ত ভান্ডার। যেদিকেই চোখ যাক,শুধু গাছ আর গাছ। তিনি রাইগাঁ ইউনিয়নের প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, খাসজায়গা, কাঁচা-পাকা রাস্তার দুই পাশসহ মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, শ্মশানঘাট, স্কুল, কলেজ এবং মহাদেবপুর-বদলগাছী দুই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বৃক্ষরোপণ করেছেন।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী বজ্র্রপাতে প্র্রতি বছর বাংলাদেশে ৩০০ মানুষ মারা যায়। তালগাছ গাছ এই মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পারে। তাই তালগাছ লাগানোর উদ্যোই শুধু নেননি। তা বাস্তবায়নও করেছেন। তার লাগানো  ‘তাল গাছ শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়; বজ্রপাতের মতো শক্তিশালী দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

কৃষকরা জানান,মাঠে কাজ করার সময় তারা তাল গাছের নীচে বিশ্রাম নেন, দূরদূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা এসে ছবি, ভিডিও করে । অধ্যক্ষ আরিফ বলেন, ‘তাল গাছ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে এ জন্য ছাত্রজীবনে বন্ধুদের নিয়ে তাল গাছগুলো রোপণ করেছিলাম। রাইগাঁ ইউনিয়নের সব রাস্তায় তালবীজ লাগিয়েছি।

আরিফুর তার এলাকার  সবুজপ্রেমীদের প্রেরণা। তাকে অনুসরন করছে অনেক তরুন। তিনি তরুনদের আইডলে পরিনত হয়েছেন। তিনি কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানেও দু চারটি গাছ লাগিয়ে আসেন।  আরিফ বলেন, মানুষের ভালোবাসা পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়। অনেক কিছুর বিনিময়ে এটি অর্জন করতে হয়। প্রবল আন্তরিকতা আর বুকের ভেতরের ভালোবাসার আকাশ ছাড়া এগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আরিফের গাছ লাগানো সর্ম্পকে মাতাজিহাট বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি অধ্যক্ষ আরিফ একজন সমাজ দরদী মানুষ। মানুষের সেবা করা ও বিপদে সহায়তায় তিনি সব সময় আন্তরিক। এছাড়া বৃক্ষরোপন তার নেশায় পরিনত হয়েছে। শহরাই তালপার্কের তালগাছগুলো ছাত্রজীবনে লাগিয়েছেন অধ্যক্ষ ও চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান। সমাজ সেবক আফাজ উদ্দীন বলেন, তিনি একজন ভাল মানুষ এবং আমাদের অনুপ্রেরনা। তিনি শহরাই তালপার্কের তাল গাছগুলো রোপন করেছেন। কবি গুলজার রহমান বলেন, বৃক্ষপ্রেমিক ছাড়াও তিনি একজন কবি ও সাদা মনের মানুষ। একটু সময় পেলেই বৃক্ষরোপনে বেরিড়য়ে যান। এলাকায় খুব জনপ্রিয় এ মানুষটি অলরাউন্ডার হিসাবেই সবার কাছে পরিচিত।

যতদিন বেচে থাকবেন । ততোদিন  গাছ লাগানো চলমান থাকবে। পাশাপাশি এলাকার সব প্রতিস্টানে একটি হলে তার গাছ থাকবে।  এমনটাই তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা। তিনি একটি সবুজ ছায়া সুনিবিড় বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *