Sunday, June 29
Shadow

চীনা গবেষণা: মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলেই তৈরি হবে জ্বালানি

মঙ্গলে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা ও মানব বসতি গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে চীনা বিজ্ঞানীরা শক্তি উৎপাদন ও সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের মতো বিশেষ পরিবেশ ব্যবহার করে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন বিশেষ ‘মার্স ব্যাটারি’। ভবিষ্যতের মঙ্গল অভিযানে টেকসই শক্তির যোগান নিশ্চিত করতে পারে এ প্রযুক্তি। একই সঙ্গে, গবেষকরা বলছেন—মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন ও জ্বালানি তৈরিও সম্ভব। আর এসব গবেষণায় ভবিষ্যতের গভীর মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে চীনের নেতৃত্বে।

মঙ্গল গ্রহের বিরূপ আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়েই কী করে সেখানে নভোচারীরা টিকে থাকতে পারবেন সেটার পথ দেখিয়েছেন চীনের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণা বলছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলটাকেই চাইলে ব্যাটারির হিসেবে কাজে লাগানো যাবে।

ইউএসটিসির গবেষক শি লিংফেং জানালেন, ‘মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে জ্বালানি তৈরির সিস্টেমের এনার্জি কনভার্টার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। মঙ্গলের বাতাসের কণাগুলো ভারী এবং এগুলোর হিট ক্যাপাসিটি অনেক বেশি। এতে করে হিট-টু-ইলেকট্রিসিটি রূপান্তর প্রক্রিয়া সহজ হবে।’

ইউএসটিসির গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে যে ৯৫ ভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে সেটা বিদ্যুৎ তৈরিতে এক ধরনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। আর এতে করে প্রচলিত হিলিয়াম ও জেনন গ্যাসের চেয়েও ২০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ তৈরি হবে।

শি লিংফেং আরও জানান, ‘মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল মানে মঙ্গল গ্রহের সম্পদ। আর সেটা ব্যবহার করাটা হবে ভবিষ্যতের মঙ্গল মিশনের জন্য একটা বিশাল প্রযুক্তিগত অর্জন।’

মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলকে কাজে লাগিয়ে শক্তি সংরক্ষণের উপায়ও বের করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা। তারা এর নাম দিয়েছেন মঙ্গল ব্যাটারি।

আর এই ব্যাটারি মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের মহাকাশযান ও ঘাঁটির জন্য শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম।

ইউএসটিসির আরেক গবেষক সিয়াও সু জানান, ‘মঙ্গল গ্রহের এই বায়ুমণ্ডল-ব্যাটারি অনেকটা লিথিয়াম-এয়ার ব্যাটারি এবং লিথিয়াম-কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যাটারির মতো একই নীতিতে কাজ করে। এটি মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল থেকে উপাদান শোষণ করে এবং সেগুলোকেই সক্রিয় গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করে, যা ভবিষ্যতে মঙ্গলের রোভার কিংবা হেলিকপ্টারে ব্যবহার করা সম্ভব।‘

গবেষকরা মঙ্গলের পরিবেশ ও দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনুযায়ী কিছু সিমুলেশন তৈরি করে তাতে ওই ব্যাটারিটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রাতেও এ ধরনের ব্যাটারি নিরবচ্ছিন্নভাবে বৈদ্যুতিক যন্ত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।

মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল যদি সরাসরি ব্যাটারি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে এ ধরনের অভিযানের ব্যাটারি ব্যবস্থার ওজনও কমে যাবে।

অন্যদিকে, মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা হলো মাইনাস ৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই কম তাপমাত্রার বায়ুমণ্ডল কাজে লাগিয়ে মঙ্গলে স্থাপন করা ভবিষ্যতের গবেষণা কেন্দ্রের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন চীনা গবেষকরা।

সেই সঙ্গে তারা এও জানিয়েছেন, মঙ্গলের গ্যাসগুলোর মাঝারি-তাপ ও উচ্চ-তাপমাত্রার বৈশিষ্ট্য  কাজে লাগিয়ে মিথেন তৈরির রিয়েকশন গ্যাস এবং ইলেকট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন তৈরি সম্ভব হবে।

গবেষক শি লিংফেংয়ের মতে, মঙ্গল গ্রহে গবেষণা কার্যক্রম চালাতে বিজ্ঞানীদের বেশকিছু ডিটেকশন যন্ত্রপাতির দরকার হবে। আর সেগুলোর জন্য দরকার হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের যোগান। আর স্থানীয় অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সেই জ্বালানি তৈরির ক্ষেত্রে চলমান গবেষণাটি তৈরি করেছে একটি দুর্দান্ত সূচনা।

চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মঙ্গল গ্রহে অনুসন্ধান জোরদার করেছে। ২০২৮ সালের দিকে ‘থিয়ানওয়েন-৩’ মহাকাশযান উৎক্ষেপণ এবং ২০৩১ সালের মধ্যে মঙ্গল থেকে নমুনা পৃথিবীতে ফেরত আনার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির।

সূত্র: সিএমজি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *