Sunday, June 29
Shadow

সমালোচনাকে পাথর বানিয়ে সাফল্যের পথে লিটন

মোঃ আল শাহারিয়া সুইট, ডিআইইউ:

সময়ের ধারায় এগিয়ে চলা কিছু মানুষের জীবন কেবল নিজের নয়, হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার উৎস। তাদের গল্পে থাকে স্বপ্ন, সংগ্রাম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির মেলবন্ধন। এমনই একজন তরুণ লিটন মাহমুদ, যিনি নিজের প্রতিভা, পরিশ্রম আর লক্ষ্যকে ভিত্তি করে গড়ে তুলছেন স্বপ্নের রাজপথ।

লিটন মাহমুদ জন্মস্থান নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। বাবা সেনা সদস্য হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই নানা ক্যান্টমেন্টের বিভিন্ন পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন লিটন। এই অভিজ্ঞতা তার ভ্রমণের আগ্রহকে আরও তীব্র করে তোলে। মাধ্যমিক শেষ করেন যশোর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল থেকে, যেখানে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। 

প্রারম্ভিক সময়ে তিনি গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই কাজের মাধ্যমে তার ডিজিটাল জগতের সাথে পরিচয় হয়, যেখানে তিনি কয়েক বছর কাজ করেন। পরিচিত এক মামা, যিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক, সেখানে কাজ করার সময় তার মধ্যে ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ জাগে। প্রথম দিকে দারুণ উৎসাহ নিয়ে ছবি তোলা শিখতে থাকেন। 

২০২২ সালে প্রথমবারের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে ওয়েডিং প্রতিষ্ঠানে এডিটর হিসেবে নিয়োগ পান, যা তার জন্য ছিল এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এডিটিংয়ের কাজ করতে করতে তার ছবি তোলার প্রতি গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠে। 

লিটন বলেন, আমি প্রথম দিকে যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতাম, সেগুলোর মূল্য ছিলো মাত্র ৩০,০০০ টাকা। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে শুরু করলেও ওই সরঞ্জাম দিয়েই অনেক কিছু শিখেছি, অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রয়োজন হয়েছে আরও উন্নত ও পেশাদার যন্ত্রপাতির। বর্তমানে আমার কাছে যে সব যন্ত্রাংশ রয়েছে এবং যেগুলো নিয়মিত ফটোগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফির কাজে ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোর মূল্য এখন লক্ষাধিক টাকারও বেশি।

তার সংগ্রামের গল্প অসংখ্য। শুরুতেই অনেক বাধা নিষেধ ও সমালোচনার মুখোমুখি হন, কিন্তু নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকেন। বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা বলে উঠত, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পড়ে ফটোগ্রাফি কেন? তবে আজকাল সেইসব লোকেরাই তার কাজের প্রশংসা করে। 

আজকের দিনে কোডিং শেখা সহজ নয়, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমি পারবো। তবে ছবি তোলা আমার কাছে এক প্রকার স্বস্তি, আমি তা খুবই ভালোভাবে রপ্ত করেছি। কোডিংও পারবো তবে একটু সময় লাগবে শিখতে। 

বয়সের সাথে সাথে তার স্বপ্ন ও ইচ্ছে বদলেছে। ছোটবেলায় ডক্টর বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, মাধ্যমিকে উঠে বিএমএ অফিসার হওয়ার চিন্তা করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় ভাবতেন, আইআর বা সরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করবেন। অতঃপর তিনি এখন নিজের আনন্দ ও স্বপ্নের পথে এগুচ্ছেন। 

বর্তমানে তার স্বপ্ন আরও বড়, লক্ষ্য শুধু নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়াই নয়, দেশের জন্য কিছু করে যাওয়ার। ২০২২-২৩ সালে ক্যারিয়ার শুরু করে তিনি বড় বড় নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশি কোম্পানির জন্য তিনি এডিটিং করছেন, যা তার জন্য গর্বের বিষয়। 

এই ফিল্ডে কাজ করা সহজ নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, আবার অনেকেই বেসিক না জেনে কাজ করে। এটি আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমি চাই, আমাদের দেশের ফটোগ্রাফি শিল্পটি আরও উন্নত হোক, শিখুক শিখে এই লাইনে আসুক। 

লিটন বলেন, বর্তমানে আমার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সিনেহান্টার। এখানে সাত থেকে আটজন সহকর্মী প্রতিনিয়ত ফটোগ্রাফি ও সিনেমাটোগ্রাফির নানান প্রজেক্টে কাজ করছেন। আমি আশাবাদী, একদিন এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে।

তাঁর চোখে শুধু দেশ নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কাজ করার স্বপ্ন। তিনি বলেন, আমি সেই লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি। আমার বিশ্বাস, একদিন আমি এমন কিছু করবো যা হবে দেশের জন্য গর্বের।

লিটনের গল্প আমাদের জন্য প্রেরণার এক বড় উৎস, তিনি মাঝেমধ্যে একটা কথা বলেন, সংগ্রাম না থাকলে স্বপ্নের সফলতা আসে না। তার দৃঢ় মনোবল ও অদম্য ইচ্ছায় তিনি প্রমাণ করেছেন, স্বপ্ন দেখলে সফলতা আসে, শুধু সাহস ও পরিশ্রমের দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *