Friday, June 20
Shadow

ফিলিস্তিনে গণহত্যা : মুসলিমরা চুপ কেন?

তামান্না ইসলাম শিক্ষার্থী ,আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া : কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ বলেছেন, মানুষের মৃত্যুতে যদি আপনার কোনো অনুভূতি না হয় তবে ভেবে নিবেন আপনিও বেঁচে নেই। আজ পৃথিবীর চিত্র দেখলে মনে হয় কবি বোধহয় আমাদের দিকে লক্ষ্য করেই বলেছিলেন কথাটি। ২০০ কোটি মুসলিম হওয়া শর্তেও ইহুদিরা ফিলিস্তিনের উপর যে বর্বর হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে তা মুসলিমরা অনায়াসে দেখছে। আরব নেতারা আজ তাদের চাটুকারিতা করছে। অথচ তারা যদি তাদের সক্রিয় রুপে ফিরে আসে তাহলে জালেমরা এতটা মাথানাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। মুসলিম দেশগুলো এক হলে তাদের বিজয় অনিবার্য। অথচ মুসলিমদের মাঝে আজ ঐক্যের অভাব। একজন সুযোগ্য নেতা ও নেতৃত্বের অভাব।

মুসলমানদের ভয় কিসে? বদর যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নেতৃত্বে ইসলাম বিজয় লাভ করেছিলেন। অথচ তার উম্মত হয়ে আজ আমরা গুটিকয়েক জালেমের ভয়ে গুটিয়ে আছি! আল্লাহ তায়া’লা বলেছেন, “ভেঙে পড়ো না, নিরাশ হয়ো না, সাহায্য আসবেই এটা আল্লাহর ওয়াদা। জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।” (সূরা বাকারা- ২১৪) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তিনি মুমিন নয়, যিনি পেট ভরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী ক্ষুদার্ত থাকে।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি) অথচ দেখা যায় ফিলিস্তিনের পাশের রাষ্ট্র যারা আছেন তারাও এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করছে না। দিনদিন তারা তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর হওয়া নির্যাতনের সাক্ষী হচ্ছে।

আমরা হয়তো ভুলে গেছি মজলুমের দোয়া আল্লাহ কিভাবে কবুল করেন। প্রতিনিয়ত গাজাবাসীরা যেভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন তাতে এই পৃথিবীর আকাশ বাতাস তাদের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে। নবী (সাঃ) বলেছেন, “মজলুমের ফরিয়াদ থেকে সতর্ক থেকো, কারণ মজলুমের ফরিয়াদ ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।” (বুখারী: ১৪৯৬) গাজার শুধু মানুষেরা নয় বরং পশুপাখিও খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। আমরা যেখান কুরবানী তে কার ঘরে কত বড় গরু জবেহ হবে সেইটা নিয়ে ব্যস্ত গাজাবাসীরা তখন না খেতে পেয়ে ভিটামিনের অভাবে হসপিটালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর পহর গুনছে অথবা তারা বোমার আঘাতে হসপিটালে শুয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামে সবচেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্তকে খাবার খওয়ানো। (বুখারী- ১২) আল্লাহ সব দেখছেন, তিনি যখন বিচার করবেন তখন আমাদের অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে তা আমরা কি একটি বারের জন্যও ভেবে দেখেছি! আমরা কি জবাব দিবো তখন? আল্লাহ তায়া’লা বলেন, “তোমরা ভয় করো না আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি এবং দেখি।” (সূরা ত্বা-হা:

ভারতেও দিন দিন মুসলিমদের উপর অত্যাচার বেড়েই চলেছে। পুরো পৃথিবীতে যেখানেই সংখ্যালঘু মুসলিম সেখানেই তাদের উপরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ এটা নিষেধ করে বলেছেন, “দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করো না।” (সূরা বাকারা- ৬০) মানুষ ভুলে গেছেন যে আল্লাহ ছাড় দেন তবে ছেড়ে দেন না। মানুষের ক্ষতি করা কোনো মানুষের জন্য শোভনীয় নয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তুমি মানুষকে ক্ষতি করা থেকে দূরে থাকবে, সেটাই হবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার জানের ছাদাকাহ। (বুখারী- ২৫১৮) দিন দিন মুসলিম দের উপরে অত্যাচার বাড়ছে আর অন্য মুসলমানরা তা যেন চোখে কাপড় বেধে না দেখার ভান ধরে আছে। মুসলমানদের উপর অত্যাচারে সকলকে এক হয়ে একে অন্যকে সাহায্য করতে হবে। আল্লাহ আমাদের ভাগ্য ততক্ষণ পরিবর্তন করবেন না যতক্ষণ না আমরা চেষ্টা করব। আল্লাহ তায়া’লা বলেন, আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থাকে পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থাকে পরিবর্তন করে। (সূরা রাদ- ১১)
 

দিনদিন ফিলিস্তিনের কথা মানুষের ভোগ বিলাশের নিচে চাপা পড়তে বসেছে প্রায়। আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের কয়েকটি মর্মান্তিক ভিডিও দেখি তখন আমাদের শোক দুঃখ প্রকাশ করি। আর যখনই সামনে নতুন কিছু আসে আমরা সেইটা ভুলে দুনিয়ার অন্য সকল আনন্দে মেতে উঠি। এটাই কি মুসলিম উম্মাদের ঐক্যে পরিচয়?  আমরা যদি এক হই তবেই ইহুদি জালেমদের হাত হতে, কাফেরদের হাত হতে মুসলিমদের মুক্তির সোপান মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *