Thursday, June 12
Shadow

হজমশক্তি বাড়াতে সকালের কোন খাবার খাবেন?

বিজ্ঞান ও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ

মোঃ জামাল হোসেন

সকালের খাবার (Breakfast) আমাদের দেহ ও মনের জন্য দিনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঘুমের দীর্ঘ বিরতির পর শরীরের জ্বালানির প্রয়োজন হয়, আর হজমশক্তি সঠিকভাবে কাজ করলেই তা শরীরকে শক্তি ও কর্মক্ষমতা দিতে পারে। হজমব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে পেটের সমস্যা, গ্যাস, অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মানসিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। তাই প্রশ্ন উঠছে—সকালে কী খাওয়া উচিত, যাতে হজমশক্তি বাড়ে?

এই বিষয়ে আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান যেমন কিছু পরামর্শ দেয়, তেমনি ইসলাম ধর্মেও রয়েছে সকালের খাবার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। এখানে বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে উপকারী কয়েকটি খাবারের কথা তুলে ধরা হলো, যার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ও ইসলামি ভিত্তি রয়েছে:

১. গরম পানি ও খেজুর

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: খালি পেটে গরম পানি হজমতন্ত্রকে প্রস্তুত করে এবং পরিপাক ক্রিয়াকে সক্রিয় করে। খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, আঁশ ও খনিজ যা পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।

ইসলামি রেফারেন্স: রাসূল (সা.) বলেছেন— “যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোনো বিষ বা জাদু ক্ষতি করতে পারবে না।” — সহিহ বুখারি, হাদিস ৫৪৪৫

২. মধু মিশ্রিত কুসুম গরম পানি

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ: আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন— “তোমাদের জন্য মৌমাছির উদর হতে নিঃসৃত পানীয়ে রয়েছে আরোগ্য।” — সূরা নাহল, আয়াত ৬৯

৩. তালমিছরি বা গুড়সহ রুটি

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: লাল আটা বা মিশ্র শস্যের রুটি ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা হজমে সহায়ক। তালমিছরি বা খেজুর গুড় প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার, যেটি পাকস্থলীর অম্ল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৪. কলা

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: এতে রয়েছে প্রাকৃতিক পটাশিয়াম, ফাইবার ও সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এটি গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ইসলামি রেফারেন্স: কুরআনে বর্ণিত আছে— “আর তারা থাকবে কলার গুচ্ছের ছায়ায়।” — সূরা ওয়াকিয়া, আয়াত ২৯

৫. দুধ ও ছানা

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: দুধ প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উৎস। এটি পাকস্থলীতে ক্ষার উৎপন্ন করে, যা অ্যাসিডিটি রোধ করে। ছানা হালকা ও দ্রুত হজমযোগ্য প্রোটিন।

ইসলামি রেফারেন্স: নবী করীম (সা.) দুধকে সর্বোত্তম খাদ্য বলতেন। তিনি দুধ খাওয়ার পর এ দোয়া করতেন: “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ওয়াজিদনা মিনহু।” — তিরমিজি, হাদিস ৩৪৫৮

৬. ফলমূল (বিশেষ করে পেঁপে, আপেল ও আমলা)

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: ফলের প্রাকৃতিক ফাইবার হজম শক্তিশালী করে। পেঁপেতে প্যাপেইন এনজাইম হজমে সহায়ক, আপেলে থাকে পেকটিন যা অন্ত্র পরিষ্কার করে।

৭. ওটস বা ভুসিযুক্ত চিড়া

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: ওটসে থাকা বিটা-গ্লুকান অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। চিড়াও সহজে হজম হয় এবং পেট ঠান্ডা রাখে।

পরামর্শ: সকালে চা-কফির বদলে লেবু পানি বা মধু পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সবসময় হালকা ও সুষম প্রাতরাশ করুন।

সকালের খাবার যেন শুধু পেট ভরানোর জন্য না হয়—তা যেন হয় হজমশক্তি বাড়ানোর এবং সারাদিন সুস্থ থাকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের নবী করীম (সা.)-এর অভ্যাস, কুরআনের নির্দেশনা এবং আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, প্রাকৃতিক ও হালকা খাবার গ্রহণই সবচেয়ে উপকারী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব সহজলভ্য খাবার সঠিকভাবে বেছে নিলে হজমশক্তি যেমন বাড়বে, তেমনি মানসিক প্রশান্তিও বজায় থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *