
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এতে পারিবারিক জীবন, বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি কীভাবে আচরণ করবে, কতটুকু অধিকার তার স্বামীর আছে এবং স্ত্রী নিজেও কোন সম্মান ও ছাড়ের অধিকার রাখে—এই সবকিছুই নির্ধারিত আছে কোরআন ও হাদিসে।
আজকের লেখাটি একজন স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে করণীয় ও আচরণবিধি নিয়ে, সহজ ভাষায় ও নির্ভরযোগ্য ইসলামি সূত্রের আলোকে।
আল্লাহ বলেন: “আর নেককার স্ত্রীগণ হয় অনুগত এবং আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেন, তা স্বামীর অনুপস্থিতিতেও রক্ষা করে।” — সূরা আন-নিসা: আয়াত ৩৪। এই আয়াতে আল্লাহ স্ত্রীর মূল গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন: স্বামীর প্রতি আনুগত্য (যা শরিয়তসঙ্গত ও যৌক্তিক), গোপন বিষয় ও পরিবারের সম্মান রক্ষা।
১. স্বামীর নির্দেশ মান্য করা:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের ইজ্জত রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে—তার জন্য জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে যেকোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।”
— মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬৬১। এতে বোঝা যায়, স্বামীর প্রতি আনুগত্য জান্নাতের পথে সহায়ক।
২. স্বামীর অধিকার অস্বীকার করা ভয়াবহ গুনাহ:
রাসুল (সা.) বলেন:
“যে স্ত্রী রাত কাটায় এমন অবস্থায় যে, তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট, ফেরেশতাগণ সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকে।” — সহিহ বুখারি: ৫১৯৩; সহিহ মুসলিম: ১৪৩৬। অবশ্যই এই নির্দেশনা স্বামীর ন্যায়ের বাইরে নয়। যদি স্বামী অন্যায় কিছু আদেশ করেন, সেটি মানা স্ত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
ইসলামে স্ত্রী শুধু দায়িত্ব পালনের যন্ত্র নয়; বরং তাকে ভালোবাসা, সম্মান, সহানুভূতির সাথে দেখার নির্দেশও রয়েছে।
আল্লাহ বলেন: “তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।” — সূরা আন-নিসা: আয়াত ১৯
“তাদের (স্ত্রীদের) যেমন অধিকার আছে, তেমনি তাদের উপর কর্তব্যও আছে স্বামীর মতোই, তবে পুরুষদের কিছুটা অগ্রাধিকার রয়েছে।” — সূরা বাকারা: আয়াত ২২৮
আয়াত দুটি বলছে— স্ত্রীর অধিকার ও কর্তব্য সমতাভিত্তিক, তবে সংসারের নেতৃত্ব পুরুষের হাতে (আয়াত ৩৪, সূরা নিসা), যার মানে কর্তৃত্ব নয়, বরং দায়িত্ব বেশি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের প্রতি নম্র আচরণের অসাধারণ উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীর সাথে সবচেয়ে ভালো আচরণ করি।” — তিরমিযী: ৩৮৯৫। অর্থাৎ, স্ত্রীদের প্রতি সহনশীলতা, ভালো ব্যবহার, সম্মান ও দয়া প্রদর্শনই হচ্ছে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ।
অনেক সময় ভুলভাবে ধারণা করা হয়—ইসলাম শুধু স্বামীর অধিকার নিয়েই কথা বলে, স্ত্রীর নিজস্ব চাহিদা বা মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। অথচ—
রাসুল (সা.) তার স্ত্রীদের মতামত নিতেন (যেমন: হুদায়বিয়ার সন্ধিতে উম্মে সালমার পরামর্শ মেনে নেওয়া)
স্ত্রীর খাবার, পোশাক, আবেগ, ভরণপোষণের প্রতি যত্ন নেওয়া ইসলামি দায়িত্ব।
স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া শারীরিক সম্পর্ক করাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ইসলামে স্ত্রীদের প্রতি আচরণ কোনো শাসনব্যবস্থা নয়, বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক। এখানে রয়েছে:
- দায়িত্ব ও কর্তব্যের সুনির্দিষ্ট সীমা,
- সম্মান ও ভালোবাসার পরিবেশ,
- পারস্পরিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তা।
একজন স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আনুগত্য দেখাবে, দায়িত্ব পালন করবে—এটাই ইসলামি দৃষ্টিতে উত্তম স্ত্রী হওয়ার মাপকাঠি। তবে ইসলাম স্ত্রীকে অবমাননার বা নিপীড়নের কোনো সুযোগ দেয়নি। বরং দিয়েছে অধিকার, মর্যাদা ও ছাড়।