
ভারতশাসিত কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সিন্ধু পানি চুক্তি আংশিকভাবে স্থগিত করেছে ভারত। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, পানিপ্রবাহ বন্ধের যেকোনো উদ্যোগকে তারা ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখবে।
প্রায় ৬৫ বছর আগে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরল এক কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখা হতো। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চুক্তি স্থগিতের তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহের ওপর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না।
ঘটনার পেছনের গল্প
সিন্ধু নদী, যা এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ নদী, বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চল অতিক্রম করে ভারত ও পাকিস্তানে প্রবাহিত। ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। তবে পাকিস্তান এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারতকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
সিন্ধু চুক্তি কী?
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি সিন্ধু নদী ব্যবস্থার পানি ন্যায্য ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। এর আওতায় ভারত রবি, শতদ্রু ও বিয়াস নদীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় এবং পাকিস্তান চেনাব, ঝিলাম ও সিন্ধু নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার লাভ করে। যদিও ভারত পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো অ-ভোগ্য ব্যবহারে ব্যবহার করতে পারে।
স্থগিতের সম্ভাব্য প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদে এর বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো নদীগুলোর প্রবাহ তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার মতো সক্ষম নয়। পাকিস্তানের পানি বিশেষজ্ঞ হাসান আব্বাসের মতে, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও তা অবাস্তব।
তবে চুক্তির অন্যতম মূল ভূমিকা ছিল বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা, যা ইতিমধ্যে বছরের পর বছর অচলাবস্থায় ছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ভারতের পদক্ষেপের কারণ
বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থির মতে, হামলার পর ভারতের জনগণের দ্রুত প্রতিক্রিয়া চাওয়ার চাপ থেকেই নয়াদিল্লি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামরিক প্রতিক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায়, পানির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা জনগণের ক্ষোভ প্রশমনে কাজে এসেছে।
এর আগে ২০১৬ সালেও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, “রক্ত আর পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।”
দীর্ঘমেয়াদে কী হতে পারে?
ভারতের মতে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে ‘জনসংখ্যার পরিবর্তন’ ও ‘পরিষ্কার জ্বালানি উৎপাদনের চাহিদা’ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সিন্ধু পানির ব্যবস্থাপনায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
ভবিষ্যতে আরো বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত যদি পানি প্রবাহ সীমিত করে, তবে তা অঞ্চলের জন্য বড় সংকটের কারণ হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহ গলছে, ফলে পানির গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে।
আঞ্চলিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, একতরফা পদক্ষেপের নজির তৈরি হলে, ভবিষ্যতে চীনও ভারত নিয়ন্ত্রিত নদীগুলোর প্রবাহ নিয়ে একইভাবে আচরণ করতে পারে। ফলে আঞ্চলিক জলের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।