
খুলনা প্রতিনিধি : দোষী প্রমাণিত না হলে চাপ প্রয়োগ করে ভিসির অপসারণ মেনে নিবেনা শিক্ষক সমিতি। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখবে শিক্ষকরা! সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়া শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা না বলায় হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।
কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। এ সময় কথা বলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক। ছাত্রদের উপর আক্রমণ ও শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের যথোপযুক্ত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকবৃন্দ কোন ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানান শিক্ষকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. আশরাফুল গণি ভূঁইয়া বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললেও শিক্ষকদের সাথে কথা বলেননি। এতে আমরা ব্যথিত হয়েছি। অল্প কয়েকজন মিছিল করলে সাংবাদিকরা নিউজ করেছে যে কুয়েট উত্তাল, অথচ কুয়েটে শিক্ষার্থী ৫ হাজারেরও বেশি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের রাজনৈতিক ট্যাগ দিচ্ছে, যা দুঃখজনক। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর করেছে, গায়ে ধুতু দিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক লাঞ্চিত হয়েছেন, তাদের নিয়ে কটুক্তি করা হয়েছে। তিনি এসবের বিচার দাবি করেন।’
মহান জুলাই আন্দোলনের পর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মব কালচারের মাধ্যমে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত ভাইস চ্যান্সেলর এর অপসারণ হতে পারে না। এই ধরনের কালচার শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই রকম মব কালচারের আশঙ্কা তৈরি হবে বলে শিক্ষক সমিতির বার্তায় জানানো হয়। মব কালচারের উপর ভিত্তি করে সরকার কর্তৃক কোন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার অনুরোধ করেন তারা। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তা মেনে নিবে না এবং শিক্ষক সমাজ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে, ১ দফা (ভিসির পদত্যাগের) দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট)’র অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
নগরীর শিববাড়ি মোড়ে দুপুর ১২টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে খুলনা নাগরিক সংগঠন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন এ কর্মসূচীর আয়োজন করেন।
একই সময়ে কুয়েট ভিসির পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের এক দফা সমর্থনে সকাল ১০টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে দ্যা রেড জুলাই নামের একটি সংগঠন।
এদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ দাবিতে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে কুয়েট ভিসির পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের এক দফা সমর্থনে দুপুর ২টায় নগরীর জিরোপয়েন্ট বিক্ষোভ সমাবেশ ব্লকেড কর্মসূচি দিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিনগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ফেসবুক পেজগুলোতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১০২তম জরুরি সভায় আবাসিক হলসমূহ আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ভাইস চ্যান্সেলরের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভূঞা সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০১তম (জরুরী সভার সিদ্ধান্তে মোতাবেক আগামী ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম চালু করা এবং ২ মে আবাসিক হলসমূহ খোলার বিষয়ে বলা হয়। বুধবার (২৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০২তম (জরুরী) সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ ২ মে এর পরিবর্তে আজ বিকালে খোলা হবে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ এবং ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুই রাত খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে ১৫ এপ্রিল ছয়টি ছাত্র হলের তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রীরাও হলের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন। বর্তমানে কুয়েটের সব হলেই শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন।