
ডেটিং অ্যাপে সম্ভাব্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া আজকাল খুবই সহজ—অ্যাপে নিবন্ধন করুন, পছন্দমতো সোয়াইপ করুন, আর হয়ে গেল! বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মানুষ এখন ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে। তবে সুবিধার এই দুনিয়ায় রয়েছে এক অদৃশ্য মূল্য।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ডেটিং অ্যাপ নারীদের মধ্যে কসমেটিক সার্জারি নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগজনক আকর্ষণ তৈরি করছে—যার পরিণতি সব সময় সুখকর নাও হতে পারে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Computers in Human Behavior জার্নালে।
‘সোয়াইপ রাইট’ আর সৌন্দর্যের চাপ
গবেষকদের মতে, ডেটিং অ্যাপ যেমন সম্পর্কের সন্ধানে সাহায্য করে, তেমনি তৈরি করে অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড। নতুন গবেষণাটি জানাচ্ছে, ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারী নারীরা কসমেটিক সার্জারি করাতে এবং বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে নিজেদের ছবি ডিজিটালি পরিবর্তন করতে বেশি আগ্রহী, তুলনামূলকভাবে যারা অ্যাপ ব্যবহার করেন না।
ডেটিং অ্যাপের মূল জোর থাকে চেহারার ওপর। ফলে ডার্মাল ফিলার, অ্যান্টি-রিংকল ইনজেকশনের মতো চেহারা-পরিবর্তনকারী কসমেটিক পদ্ধতি গ্রহণে ২০% নারী প্রভাবিত হন বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে। অ্যাপ ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বাড়লেও, এটি যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে তা অস্বীকার করা যায় না বলে জানিয়েছেন প্রধান গবেষক ও প্রোভিশনাল সাইকোলজিস্ট নাওমি বুরখার্ট, যিনি UniSA ব্যাচেলর অব সাইকোলজি (অনার্স)–এর গ্র্যাজুয়েট।
তিনি বলেন,
“ডেটিং অ্যাপের দৃশ্যভিত্তিক প্রকৃতি—যেখানে ছবি-নির্ভর প্রোফাইল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—ব্যবহারকারীদের ওপর আদর্শিক, কিন্তু অবাস্তব একটি চেহারা তুলে ধরার চাপ তৈরি করে।”
অনলাইন ডেটিং কীভাবে গড়ে তোলে অবাস্তব সৌন্দর্যের মানদণ্ড
প্রভাব বোঝার জন্য গবেষকরা ১৮ থেকে ৭২ বছর বয়সী ৩০৮ জন অস্ট্রেলীয় নারীকে নিয়ে জরিপ চালান। তাঁদের প্রায় অর্ধেক গত দুই বছরে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করেছেন, আর পাঁচ জনে একজন অন্তত একটি কসমেটিক প্রক্রিয়া করিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গবেষকরা আরও দেখেছেন—ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারী নারীরা কসমেটিক সার্জারির ব্যাপারে তুলনামূলকভাবে আরও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। পাশাপাশি, চেহারার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় অ্যাপগুলো নারীদের শরীর নিয়ে অসন্তুষ্টি, খাদ্যাভ্যাসজনিত সমস্যা, উদ্বেগ এবং স্বল্প আত্মসম্মানের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।
এর আগে সাধারণভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে কসমেটিক সার্জারির গ্রহণযোগ্যতার সম্পর্ক পাওয়া গেলেও, ডেটিং অ্যাপের নির্দিষ্ট ভূমিকা নিয়ে তেমন তথ্য ছিল না। UniSA–এর সহ–গবেষক লরেন কনবয় বলেন,
“অ্যাপে চেহারার গুরুত্ব কমাতে আরও ব্যক্তিত্বভিত্তিক ম্যাচিং অ্যালগোরিদম চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের চাপ কমাতে স্ব-সহানুভূতি অনুশীলনের মতো বডি-ইমেজ–ভিত্তিক টুল অ্যাপে যোগ করা যেতে পারে।”
ডেটিং অ্যাপের দুনিয়া আরও বিস্তৃত হচ্ছে
ডেটিং ওয়েবসাইট eHarmony–এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে ৭০%–এর বেশি সম্পর্কের সূচনা হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।
গবেষণার আরেক সহ–লেখক ড. জন মিনগোইয়া বলেন,
“আমাদের গবেষণা ভবিষ্যতে এমন সব উদ্যোগ নিতে সহায়তা করবে, যা ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং একই সঙ্গে নারীরা কেন নিজেদের চেহারা বদলাতে চান—সেটি বোঝায় মনোরোগ–বিশেষজ্ঞদের সাহায্য করবে।”
