Saturday, September 20
Shadow

নাসির নগরে কুকুরিয়া খালের ভাঙ্গা ব্রিজের ধ্বংসাবশেষ, চরম ভোগান্তিতে এ জনপদে মানুষ

খ, ম, জায়েদ হোসেন, নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকেঃ

ব্রাহ্মণ বাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার কুকুরিয়া খাল। তিন বছর ধরে এ খালে পড়ে আছে ভাঙা সেতুর ধ্বংসাবশেষ। নারী-শিশু-বৃদ্ধ সেতুর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ট্রলারে ওঠে। পারাপারের সময় পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে অন্তত পাঁচজনের, আহত অর্ধশতাধিক। অথচ তিন বছরেও নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
গোকর্ণ, কুন্ডা, পূর্বভাগ, হরিপুর, উপজেলা সদরসহ পাঁচ ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত কুকুরিয়া খাল দিয়ে। গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে পাউবো এ খালের ওপর ৩৯ মিটার দীর্ঘ সেতু ও ছয় কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে। ২০২২ সালের বন্যায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই বছরেই সাপোর্ট টু রুরাল ব্রিজেস প্রকল্পের আওতায় ৬৯ মিটার নতুন সেতু নির্মাণের জন্য সাত কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। ‘অর্থ সংকট’ দেখিয়ে সেই প্রস্তাব পাস করা হয়নি। এরপরও কয়েকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

হতাহতদের স্বজনের হাহাকার
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর ভাঙা পিলারগুলো এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। ভাঙা সেতুর পাশ দিয়ে পারাপারের সময় ২০২২ সালে গোকর্ণ গ্রামের কৃষক চিত্ত দাস, ২০২৩ সালে চানপাড়ার হাদিস মিয়া, ২০২৪ সালে সরাইলের ইকবাল মিয়া মারা যান। চলতি বছরের ৩০ মে প্রাণ যায় দুই শিশু মারিয়া ও ফারিয়ার। তাদের লাশ ভেসে ওঠে দুই কিলোমিটার দূরে তিতাস নদীতে। সেতু না থাকায় সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে গোকর্ণ গ্রামের অন্তঃসত্ত্বা দীপালি সূত্রধর, শ্বাসকষ্টের রোগী আলীজান মিয়া, স্ট্রোকে আক্রান্ত সাংবাদিক রফিকুল ইসলামসহ অনেকে মারা গেছেন।
কথা হয় নিহত শিশু মারিয়া ও ফারিয়ার বৃদ্ধ দাদা দ্বীন ইসলামের সঙ্গে। নাতিদের কথা মনে পড়লেই ছুটে আসেন খালপাড়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সেতু ঠিক করলে নাতি দুইডা পানিতে ডুইব্যা মরতো না, আইজ ইস্কুলে যাইত।’
গোকর্ণ গ্রামের রিনা দাস আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার বইনডার প্রসব বেদনা উঠছিল। সেতু নাই, তাই ১৫ কিলোমিটার ঘুইরা জেলা হাসপাতালে নিতে হইল। রাস্তায় ঝাঁকুনিতে বাচ্চাটা পেটেই মইরা গেল।’
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ শাহীন বলেন, ‘উপজেলা থেকে জেলা পর্যন্ত গিয়ে দাবি জানিয়েছি। জরুরি প্রকল্প তালিকায় নামও উঠেছে। কিন্তু তিন বছরেও দরপত্র হয়নি।’

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী প্রণয় জিৎ বলেন, সেতুটি পাউবো নির্মাণ করেছিল। বন্যায় ধসের পর জেলা প্রশাসকের সভায় এলজিইডি এটি নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। তিন বছরেও কেন হলো না, তা তাদের জানা নেই।
উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা সেতুটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি লিখেছি। বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করে মাপজোক করেছি। কয়েকবার প্রস্তাবও পাঠিয়েছি। কী কারণে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব আটকে আছে, বুঝতেছি না।
ইউএনও শাহিনা নাসরিন বলেন, ‘সেতুটি না থাকায় এ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছে। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *