Saturday, September 20
Shadow

দিনের কর্মসময় কর্মনিয়োজিত থাকার আইন : অপরাধ প্রশমনের নতুন দিশা


…..স্বপন বিশ্বাস

অপরাধ দমনে কঠোর আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রয়োজন হলেও এটি যথেষ্ট নয়। সমাজে অপরাধ কমানোর জন্য মানুষের জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা আনা এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। আজকের বাংলাদেশে বেকারত্ব ও অলস সময় কাটানো এক বড় সমস্যা। যখন কোনো মানুষ দিনের কর্মক্ষম সময়ে কাজে যুক্ত থাকে না, তখন তার ভেতরে অবসাদ, হতাশা বা প্রলোভন জন্ম নেয়। সেই শূন্য সময়ই অনেককে চুরি, ছিনতাই, নেশা বা সহিংসতায় ঠেলে দেয়। তাই একটি জাতীয় নীতি বা আইন প্রণয়নের সময় এসেছে, যা দিনের কর্মসময় সব শ্রেণির মানুষকে কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত রাখতে বাধ্য করবে।
অপরাধ দমনে কর্মঘণ্টার গুরুত্ব
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়ের একটি বড় অংশই মানুষের অলসতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশেষ করে যুবসমাজ যখন বেকারত্বের বোঝা নিয়ে বসে থাকে, তখন তাদের ভেতরে অপরাধপ্রবণতার ঝুঁকি বাড়ে। কর্মঘণ্টার ভেতরে সকলে কাজে যুক্ত থাকলে অপরাধ করার মতো অবকাশই তৈরি হবে না। কাজ মানুষকে শুধু জীবিকা দেয় না, বরং নৈতিক শৃঙ্খলা, মানসিক ভারসাম্য ও দায়িত্ববোধও গড়ে তোলে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক স্থিতি
সকল শ্রেণির মানুষ কর্মঘণ্টায় কাজে নিয়োজিত হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। কৃষি, শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা সেবা খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এতে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে, একই সঙ্গে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। কর্মব্যস্ত সমাজে অপরাধের সংখ্যা স্বভাবতই কমবে, ফলে নাগরিকরা নিরাপদ বোধ করবে। এটি সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাস্তব চ্যালেঞ্জ
তবে এ ধরনের আইন বাস্তবায়নে কিছু বাস্তব চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নারী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত কাজ নিশ্চিত করা জরুরি। শহর ও গ্রামের কাজের প্রকৃতি আলাদা, তাই একই কাঠামো সবার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আবার সরাসরি আইন চাপিয়ে দিলে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই এ উদ্যোগকে আইন নয়, বরং “কর্মনিয়োজিত থাকার জাতীয় নীতি” হিসেবে গ্রহণ করাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ হতে পারে।
করণীয়
কর্মঘণ্টাভিত্তিক কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা কর্মসূচি চালু করা।যুবসমাজকে দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজের সঙ্গে যুক্ত করা।
কর্মক্ষমতার বাইরে থাকা মানুষদের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত করা।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল ও সামাজিক কাজে অন্তর্ভুক্ত করা।
স্থানীয় বাস্তবতায় কৃষি, পশুপালন ও ক্ষুদ্র উদ্যোগকে সম্প্রসারণ করা।
উপসংহার
দিনের কর্মসময় প্রতিটি শ্রেণির মানুষকে কর্মে নিয়োজিত রাখার উদ্যোগ অপরাধ প্রশমনের পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এটি হবে একটি প্রতিরোধমূলক কৌশল, যা কেবল অপরাধ দমনই নয়, বরং মানুষের জীবনমান উন্নত করবে। সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা শুরু করার। আগামী দিনের নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে কর্মঘণ্টাভিত্তিক কর্মসংস্থান নীতি হতে পারে নতুন দিশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *