Saturday, September 20
Shadow

শিশুদের হাতে স্মার্টফোন: আশীর্বাদ না অভিশাপ?

আজিজুল ইসলাম নাফিজ : একবিংশ শতাব্দীতে এসে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে একটিও স্মার্টফোন নেই। শুধু বড়রা নয়, শিশুদের হাতেও এর অবাধ ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। প্রায়ই মায়েরা শিশুদের কান্না থামাতে বা খাওয়ানোর জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেন। এটি এখন প্রতিদিনের একটি চিত্র এবং শিশুদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯২% শিশু তাদের বাবা-মায়ের স্মার্টফোন ব্যবহার করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, শিশুদের জন্য এটি কি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

স্মার্টফোনকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করা গেলে এটি শিশুদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।

  যোগাযোগ এবং জ্ঞান অর্জন: স্মার্টফোন যোগাযোগের একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা শিশুদেরকে সারা বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হতে সাহায্য করে। তারা অনলাইন সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং ক্লাসে অংশ নিয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারে।

  শিক্ষার সহজলভ্যতা: ইন্টারনেটে হাজার হাজার ই-বুক পাওয়া যায়, যা থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারে। ইউটিউবে যেকোনো সমস্যার সমাধানসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর শিক্ষামূলক ভিডিও পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।

শিশুদের জন্য স্মার্টফোনকে ভালো কাজে ব্যবহার করা বেশ কঠিন। তাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ গড়ে তোলা খুব জরুরি। যদি তারা তাদের লক্ষ্য স্থির করতে না পারে, তাহলে স্মার্টফোন তাদের জীবনে অনেক ক্ষতি করতে পারে।

  আসক্তি: বাংলাদেশের প্রায় ৮৬% স্কুল পড়ুয়া শিশু স্মার্টফোনে আসক্ত এবং এর মধ্যে ২৯% মারাত্মকভাবে আসক্ত। এই আসক্তি শিশুদের শিক্ষার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে যথেষ্ট।

 শারীরিক ক্ষতি: দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে চোখ, মাথাব্যথা এবং দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। রাতে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে ঘুমের হরমোন কমে যায়, যা অনিদ্রার কারণ হয়। খেলাধুলার পরিবর্তে বসে ফোন ব্যবহার করলে স্থূলতা এবং শারীরিক সক্ষমতা কমে যেতে পারে।

  মানসিক ক্ষতি: নিয়মিত গেম, ভিডিও বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করলে শিশুরা সহজেই উদাসীন হয়ে পড়ে। এতে তাদের পড়াশোনায় আগ্রহ কমে যায় এবং মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে শিশুরা গবেষণার ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কোনো বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে না। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনুপযোগী কন্টেন্ট, নেতিবাচক খবর বা সাইবারবুলিং শিশুদের মনে ভয়, দুশ্চিন্তা ও হতাশা তৈরি করতে পারে।

  সামাজিক ক্ষতি: স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুরা পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর পরিবর্তে ভার্চুয়াল জগতে ডুবে থাকে। বাইরে খেলাধুলা না করলে তাদের সামাজিক দক্ষতা কমে যায় এবং একাকীত্ব বেড়ে যায়।

আশীর্বাদ না অভিশাপ, নাকি দ্বিমুখী হাতিয়ার?

স্মার্টফোন শিশুদের জন্য একাধারে যেমন জ্ঞান ও প্রযুক্তি অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে, তেমনি এটি তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক জীবনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই এটিকে নিছক আশীর্বাদ বা অভিশাপ বলা যায় না, বরং এটি একটি ‘দ্বিমুখী হাতিয়ার’।

স্মার্টফোন যেন শিশুদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠে, সে জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। তাদের উচিত শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া, কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য বিকল্প পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে স্মার্টফোনই হতে পারে আগামী প্রজন্মের উন্নয়নের সহায়ক শক্তি।

আজিজুল ইসলাম নাফিজ 

শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *