
রোকুনুজ্জামান, জবি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর এবং জবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুইদিনের আল্টিমেটাম ঘোষনা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে জবি মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। জকসু নির্বাচন ও আবাসনের জন্য সম্পূরক বৃত্তি প্রদানে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের গাফিলতিতে ‘আবাসন আমার অধিকার রুখে দিবে সাধ্য কার’, ‘জকসু নিয়ে গাফিলতি চলবে না চলবে না’, ‘যেমন করে আনতে জানি তেমন করে ছুঁড়তেও জানি -পিও প্রশাসন’, ‘শিঁরদাড়া শক্ত করো অজুহাত বন্ধ করো’ সহ বিভিন্ন স্লোগান ও প্লাকার্ড নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনের বক্তব্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৮তম ব্যাচ অর্থাৎ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আকাশ বলেন,” আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পানির ফিল্টারের জন্য পর্যাপ্ত আন্দোলন করতে হয়। আমরা মার খেয়ে যে দাবি আদায় করলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আপনারা যদি আপনাদের দ্বায়িত্ব পালন করতে না পারেন তাহলে আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের ছেড়ে দেন। এইভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলেন না। শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করতেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে অথচ তারা এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র কনসার্ন নাই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা চলছে আমাদের প্রশাসন সেখানে ঘুমাচ্ছে। আপনারা যদি আপনাদের দাবি না মানেন তাহলে লং মার্চ টু যমুনার মতো আমরা এমন আন্দোলন করবো যেখানে আপনাদের দাঁড়ানোর অবস্থা থাকবে না।”
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “আমরা গত ৫ আগস্টের আন্দোলন সফল হওয়ার পর ভেবেছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমাদের আলাদা করে কিছু চাওয়ার লাগবে না, সব দাবিগুলো এমনিতেই পাওয়ায় পরিণত হবে। কিন্তু এই দাবি গুলো আদায়ের জন্য টানা ২দিন অনশন সহ ২বার সচিবালয়ে টানা ৩দিন অবস্থান এবং ১বার যমুনায় অবস্থান করে আমরা আদায় করে নিয়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সেই আদায় করা দাবি বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারে নাই। ৫ আগস্ট পরবর্তি সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোনো ছাত্র সংগঠন নাই যারা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জকসুর দাবি জানায় নাই। কিন্তু এই দৃষ্টিহীন, কান কালা প্রশাসন আমাদের দাবি দেখতে ও শুনতে পায়নি। ১ বছর হয়ে গেলেও জবির শিক্ষার্থীরা এখনও হলে উঠতে পারে নাই। এই সপ্তাহের ভেতরেই যদি জকসুর রোডম্যাপ ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।”
এজাড়াও বক্তৃতা প্রদান পর্বে আইন বিভাগের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং জবির ইসলামিক ছাত্র শিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বারবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানালেও প্রশাসন সেটা করতে সক্ষম হয় নাই। আমরা হল নির্মাণের দাবি জানালেও প্রশাসন এখনও দৃশ্যমান কোনো কাজ করতে পারেনি। আগামী ২ কর্মদিবসের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ কবে ঘোষনা করা হবে তার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষনা করতে হবে। দ্রুত হবে, অতি দ্রুত হবে, কাজ চলমান এই ধরনের ফাইজলামি কথা যদি দ্বিতীয় বার কেউ উচ্চারণ করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি দামামা বাজায় তাহলে শুধু পুরান ঢাকা নয় পুরো ঢাকা শহর সেই শব্দে কেঁপে ওঠে। আমি প্রশাসনকে হুশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আমাদের কথাগুলো যদি শুধুমাত্র আস্ফালন হিসেবে গ্রহণ করেন তাহলে এটাই হবে আপনাদের সর্বশেষ ভুল।শিক্ষার্থীদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মুখে আপনারা আর আইসক্রিম দিয়ে ঠান্ডা করতে আসবেন না। যদি জকসু আদায় না হয়, যদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন ভাতাসহ সম্পূরক ভাতা দেওয়া না হয় তাহলে আবার দ্বিতীয়বার আন্দোলনের ডাক আসবে। আবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো সক্ষমতা আপনাদের তৈরি হয় নাই। সুতরাং সাধু সাবধান।”