
জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর:
যশোর শহরের উপশহর পার্ক সংলগ্ন এলাকায় পার্কিং করে রাখা একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার ভোররাতের এই ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাসটির ভেতরে। স্থানীয়দের দ্রুত তৎপরতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে পাশের বস্তিবাসীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোর ৫টার কিছু পর ফজরের নামাজ শেষ করে ফেরার পথে কয়েকজন মুসল্লি হঠাৎ বাসটির ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন। তারা ছুটে গিয়ে দেখতে পান আগুন জ্বলছে, ভেতরে কেউ নেই। মুহূর্তেই আগুনের তীব্রতা বেড়ে যায়। পরে বস্তিবাসীরা বালতি ও পানি দিয়ে প্রায় ২০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বাসটির সুপারভাইজার মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার হান্নান খান জানান, ‘রাহিন স্পেশাল’ নামের বাসটি (মাগুরা জ-১১-০০০৭) নিয়মিত যশোর-মাগুরা রুটে চলাচল করে। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও বাসটি উপশহর এলাকায় পার্কিং করে রাখা হয়। তিনি বলেন, “আমি রাতে বাসের ভেতরেই ছিলাম। ভোরে নামাজের পর বাসায় ফিরি। কিছুক্ষণ পর খবর পাই বাসে আগুন ধরেছে। দুর্বৃত্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিয়েছে বলে মনে হয়। আগুনে সিট, তার ও জানালার গ্লাস পুড়ে গেছে। তবে ইঞ্জিনের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।”
এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। কারণ, বাসটির পাশে রয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকা। স্থানীয়দের দাবি, যদি আগুনটি বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ত, মুহূর্তেই কয়েক ডজন পরিবার ঘরহারা হয়ে যেত। তাদের সাহসী ভূমিকার কারণেই একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
খবর পেয়ে যশোর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তারা আগুনের স্থান পরিদর্শন করে এবং প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন, বাসটির জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন লাগানো হয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ড্রাইভারের সিটের পাশের জানালা ভেঙে ভেতরে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে থাকা নাইটগার্ড তখন পাশে চা খেতে গিয়েছিলেন। আমরা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে কাজ শুরু হয়েছে।”
এদিকে, স্থানীয়রা ধারণা করছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ঘটনাটি হতে পারে একটি পরিকল্পিত নাশকতার অংশ।
উল্লেখ্য, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে লকডাউনের ডাক দিয়েছে। এর জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারই প্রভাব যশোরেও পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
পুলিশ বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো উপশহর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
