Friday, September 19
Shadow

 মেঘনায় মিলছে না রুপালি ইলিশ হতশায় দিন কাটাচ্ছেন জেলে পরিবারগুলো

কে এম মাহমুদ রিয়াজ: মেঘনায় রূপালী ইলিশের দেখা মিলছে না। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না জেলেদের। ভরা মৌসুমে ও মিলছে না মেঘনার কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ। মেঘনার কোল ঘেসে জেলে পরিবারগুলোর হতাশায় দিন কাটাছে। দিনের পর দিন নদীতে জাল ফেলেও বেশিরভাগ জেলে ফিরছেন খালি হাতে। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন জেলার অর্ধ -লক্ষাধিক জেলে পরিবার। ক্ষতির মুখে পড়েছেন আড়ৎদার ও মাছ ব্যবসায়ীরা। ইলিশের খুঁজে জাল নিয়ে নদীতে ঝাপাচ্ছেন মেঘনাপাড়ের জেলেরা। তবে দীর্ঘ সময় নদীতে কাটিয়েও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। গত দুই মাস ধরেই চলছে এমন পরিস্থিতি। মেঘনার ৩০টি মাছঘাটে প্রতিদিন যেখানে গড়ে বেচাবিক্রি হতো প্রায়  চার টন ইলিশ, সেখানে এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একেবারেই নগণ্য ।

গত অর্থবছরে লক্ষ্মীপুরে ২/৩ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন হলেও এবারের  চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন । প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ইলিশের বাজার মূল্য এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে জেলে পরিবার থেকে শুরু করে সবার মুখে এখন একটাই কথা, ‘ইলিশ গেলো কই?’

মজু চৌধুরীর ঘাটের মৎস্যজীবী শিপন, খালেক, মালেক, আব্দুর রশিদ, বসিরসহ অনেকে জানিয়েছেন – বর্ষা মৌসুমে যেখানে প্রতিদিন ২০-৩০ কেজি ইলিশ ধরা পড়তো, সেখানে এখন জাল তুলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে ধারদেনা কিস্তি নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে মৎস্যজীবীরা । আগে দিনে ২০-৩০ কেজি মিলতো, এখন ২-৩ কেজিও পাওয়া যায় না। ঘরে চাল নাই, ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চিন্তিত এসব জেলেরা।

ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় আড়ৎদার ও মাছ ব্যবসায়ীরাও। আড়ৎদারের দায়িত্বে থাকা মাইনুদ্দিন  বলেন, “মাছ না থাকলে আড়ৎ চালানো দায়। প্রতিদিন অনেক খরচ । গত তিনদিনে অল্প কিছু মাছ জেলেদের জালে উঠলেও হতাশা কাটছে না।”

দেশের বিভিন্ন জেলায় ইলিশ রপ্তানি করা সেলিম  ব্যাপারী বলেন, “প্রতি মৌসুমে যেখানে ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ বাজারজাত হতো, এখন দিনে ১-২ মণ ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু মাছ পাই, দাম এত বেশি যে মানুষ কিনতেই পারছে না। ব্যবসায় আমরাও ক্ষতিতে আছি।”

মৎস্য বিভাগ বলছে, নদীতে লবণাক্ততা কমে যাওয়া, পানির প্রবাহে পরিবর্তন এবং জলবায়ু প্রভাবের কারণে ইলিশের প্রজনন ও আগমন ব্যাহত হচ্ছে। রামগতি উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ উজ্জামান জানান, মেঘনায় এবার ইলিশের যথেষ্ট স্বল্পতা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরকারিভাবে এখনো মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসন কিংবা প্রণোদনার বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি। তবে মা ইলিশ বা জাটকা আটকা নিধনে যে অভিযান হয় সে  সময়ে কাডর্ধারী  মৎস্যজীবীরা সরকারি সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “ইলিশের মাইগ্রেশনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। প্রাকৃতিক প্রভাব ও পরিবেশগত কারণে মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে গত কয়েকদিনে কিছুটা ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *