Thursday, November 20
Shadow

ভুল বুঝাবুঝির ফাঁদে 

সাবিত রিজওয়ান

আমি যাকে ভালোবাসতাম—তার নামের একটি শব্দ আজও আমার মনে বাজে। শব্দটি হলো “তাসমিন”। একসময় আমরা বন্ধু ছিলাম।

১৭ জানুয়ারি ২০২৪, আমি সাহস করে তাকে বলেছিলাম,

“তোমায় অনেক ভালোবাসি… তুমি কি আমায় ভালোবাসবে?”

ভাবতেও পারিনি, এই কথাটাই তার মনে আঘাত হয়ে ফিরে আসবে। সেদিন থেকেই আমাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরল। এখন দুজনেই একে অপরের প্রতি বিরক্ত।

তাসমিনকে ভালো মনে করেই বন্ধুত্ব করেছিলাম। প্রথম পরিচয়ের কিছু ভঙ্গি ও আচরণ আমাকে ভুল বুঝিয়েছিল—মনে হয়েছিল হয়তো সে আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু পরে বুঝলাম, মনে হওয়াটাই ভুল ছিল।

আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বোঝাবুঝি ঘটল জুন মাসে। ১৭ জুনের কয়েকদিন আগে ভুলবশত আমার লেখা একটি প্রেমময় ছন্দ চলে যায় তাসমিনের নম্বরে। পাঠানোর কথা ছিল আমার বন্ধু মাইদুলকে।

মাইদুলের নম্বর ফোনে সেভ ছিল “Maidul”, আর তাসমিনের নম্বর “Maiya” নামে। তার সাথে কখনো ফোনে কথা হয়নি, আমি ভুলে গিয়েছিলাম তার নম্বর ফোনে আছে। আমরা বন্ধুত্বের সময় মজা করে তাকে ‘মাইয়া’ বলতাম—গাইবান্ধার আঞ্চলিক ভাষায় মেয়েদের বা বোনদের এভাবেই ডাকা হয়।

একদিন শালমারা গিয়ে স্কুল মাঠে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি, ‘জুঁই’ নামের কেউ মাইদুলকে মেসেজ দিয়েছে। জিজ্ঞেস করতেই সে প্রথমে লুকাল। পরে নিজেই বলল,

“এটা আমার গার্লফ্রেন্ড। তুই তো কবিতা লিখিস, আমার জন্য কিছু ছন্দ লিখে দেস তো।”

আমি লিখলাম, কিন্তু ভুলবশত ছন্দটি চলে গেল “Maiya”-তে, অর্থাৎ তাসমিনের নম্বরে। সেখান থেকেই সব ভুলের শুরু।

তার উচিত ছিল সরাসরি আমাকে জিজ্ঞেস করা “তুই কি ভুল করে আমার নম্বরে মেসেজ পাঠাইছিস?”

কিন্তু সে সেটা না করে আমার সম্পর্কে অভিযোগ করল আমার মাকে। পরে, তার মা আমার মাকে এমনভাবে কথা বলল—যা মাকে গভীরভাবে অপমানিত করল। আমি তখন কিছুই বলতে পারিনি।

মা ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার।

তাসমিনের নামের একটি অংশ “নাহার”। আরেকটি অংশ “নূরী বা নুড়ি”—তার মায়ের মুখে শুনেছি তাকে “তাজনুড়ি” বলেও ডাকে।

হয়তো এখন সে অন্য কাউকে ভালোবাসে—শুনেছি নামটা রিফাত। নিশ্চিত জানি না। ১৭ জানুয়ারির পর থেকে যখনই সে আমার সামনে আসে, এমনভাবে আচরণ করে—যেন কোনোদিন আমার সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল না।

ওই সময় আমার জীবনও কষ্টে ভরা। বন্ধু-বান্ধব ধীরে ধীরে দূরে সরে গেল। বেকারত্ব আর ব্যর্থতা আমাকে আরও একা করে দিল।

তাসমিনের মা আমার মাকে অপমান করার কিছুদিন পর থেকেই আমি কনিকা আক্তার সিমার সাথে ৮–৯ মাস প্রেমে জড়াই। সেখানে আমি কোনো প্রতারণা করিনি। বরং সিমাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিল। তবু, সম্পর্কের গভীরে একটা চাপা ব্যথা ছিল—তাসমিনকে দেখাতে চেয়েছিলাম,

“দেখ, তুই আমায় ভালোবাসিস না, ঠিক আছে… কিন্তু আমাকেও কেউ ভালোবাসে।”

শেষ পর্যন্ত—তাসমিন, সিমা, রিফাত—এসব নামের কোনো মূল্যই আর নেই।

কিন্তু মায়ের প্রতি তাসমিনের করা অপমান আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না।

আর এই ভুল বুঝাবুঝিই আজ আমাকে এই গল্প লিখতে বাধ্য করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *