Thursday, September 18
Shadow

 ফিরে যদি আসো একদিন 

একেএম নাজমুল আলম 

সামনে রাখা মোবাইল স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে শেষবার নীলাঞ্জনা পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ –

“তুমি সব কিছুতেই তোমার কাজ, ভবিষ্যৎ আর স্বপ্ন নিয়ে এত ব্যস্ত, আমি কোথায় আছি সেটা কখনও ভেবেছো?”

তারপর থেকে আর কোনো উত্তর নেই।

 দুই বছর আগের গল্প

সফল তখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র, অদম্য স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়েছে—নিজেকে একজন সফল এন্টারপ্রেনার বানাবে।

আর ?

তার ক্লাসমেট, তার বন্ধু, তার প্রেম—সবই একসাথে।

কখনও গুলিস্তানের ফুটপাত ধরে হেঁটে চা খাওয়া,

কখনও মোহাম্মদপুরের নদীর ধারে বসে শুধু চুপচাপ থাকা—

সফলের জীবনে নীলাঞ্জনা ছিল একটি অনুভব, একটি সাহস, একটি ঘরের মতো নিরাপদ স্থান।

কিন্তু সফল ছিল স্বপ্নপিপাসু—

সে কাজ করত স্টার্টআপে, রাত জাগত, কোড লিখত,

বিনিয়োগ খুঁজত, ভবিষ্যৎ বানাত।

এবং একই সাথে দূরত্ব তৈরি করত।

 নীলাঞ্জনা বলত, “ভালোবাসা মানে শুধু পাশে থাকা না, একটু সময় দেওয়া। তুমি আমায় হারিয়ে ফেলছো, সফল।”

সফল বলত, “আমি এখন না করলে কখন করবো? তুমি বুঝো না।”

একদিন, হুট করেই নীলাঞ্জনা দেশ ছেড়ে চলে গেলো—চলে গেলো কানাডায়, স্কলারশিপে।

কেউ কাউকে কিছু বলেনি।

শুধু এক মেসেজ, এক নীরবতা—আর একটি শেষ না হওয়া প্রশ্ন:

“যদি ফিরে আসো, তখন কী আমি থাকবো?”

 বর্তমান

আজ দুই বছর পর, সফল একটি বড় সফটওয়্যার কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

পত্রিকায় নাম, সাক্ষাৎকার, টক শো—সবই পেয়েছে।

শুধু পায়নি এক কাপ চায়ের সঙ্গে  নীলাঞ্জনা চোখে চোখ রাখা মুহূর্তটা।

এই শহরে, এই শহরের প্রতিটি কোণে তাদের স্মৃতি আছে।

তবুও সফল একা।

আজকের সন্ধ্যায় সে এক বন্ধুর বিয়েতে নিমন্ত্রিত।

কানাডা থেকে কনের এক বান্ধবী এসেছে—

নাকি পুরনো পরিচিত?

সফল হাসিমুখে যখন গেট পেরোয়, হঠাৎ চোখ পড়ে…

হলুদ শাড়ি পরা এক নারী, হালকা চশমা, মুখে নরম এক চেহারা…

নীলাঞ্জনা!

সফলের গলা শুকিয়ে যায়।

হাজার শব্দ মনে এলেও মুখে কিছু আসে না।

 নীলাঞ্জনা আসে।

— “তুমি কি এখনো সময় দাও না?”

— “আমি এখনো অপেক্ষা করি…”

— “কার জন্য?”

— “যার জন্য আমি সবকিছু করেছি। কিন্তু শুধু তাকে সময় দেইনি।”

নীলাঞ্জনা হেসে ফেলে। চোখ ভিজে।

— “তুমি জানো? আমি চেয়েছিলাম তুমি সেদিন এসে বলো, ‘থাকো।’ তুমি চুপ ছিলে। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর আমাকে চাও না।”

সফল নিচু গলায় বলে, “আমি তো বলতেই পারিনি—ভয়ে, ব্যস্ততায়, আহম্মকিতে। এখন জানি—তুমি না থাকলে আমার সফলতা অর্থহীন।”

চারদিকে বাজছে বিয়ের গান।

কিন্তু ওদের জন্য যেন পুরো কনভেনশন সেন্টার নিস্তব্ধ।

— “তুমি কি আবার চলে যাবে?”

— “তুমি কি এবার বলবে ‘থাকো’?”

— “থাকো। আমি চিৎকার করে বলবো এবার, যদি দরকার হয়।”

— “তাহলে এবার থাকবো।”

শেষ দৃশ্য

বৃষ্টিতে ভেজা শহরের ভেতর দিয়ে দুজন মানুষ হাঁটছে—

একটা ছাতা ভাগ করে নিয়ে।

এই শহর তাদের চেনে।

তারা ফিরেছে।

তারা একে অপরের কাছে ফিরেছে।

ভুল, অভিমান, দূরত্ব—সব ছাপিয়ে ভালোবাসা ঠিক নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে।

গল্প পাঠাতে মেইল করুন: ajkerkagoj2025@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *