
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে আমানতকারীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন। গ্রাহকদের চেক ফেরত দেওয়া হচ্ছে, জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারছেন না অনেকেই। রাজধানীর সাংবাদিক নাজমুল হক তার মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা তুলতে গেলেও চেক ফেরত পান। বারবার ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে জানালেও তিনি কোনো সদুত্তর পাননি।
অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রভাবে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ২০২৪ সালে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সমন্বিতভাবে ৪০৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যেখানে আগের বছরই তারা ৩২৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। লোকসানের কারণে গত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশও দিচ্ছে না ব্যাংকটি।
ব্যাংকের সংকটের বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এস আলম গ্রুপের ঋণ নির্ভরতা। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম)। বিভিন্ন নামে ব্যাংকের প্রায় ৭০ শতাংশ ঋণ নিয়েছেন তিনি। সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনে এস আলম পরিবারকে সরিয়ে দেয়। এরপর থেকে কৌশলে নিয়মিত দেখানো অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে।
তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের আমানত দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা এবং ঋণ ৬০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের হার তখন ৩০ শতাংশে পৌঁছায়, বর্তমানে তা দ্বিগুণ হয়েছে। মূলধন ঘাটতিও দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকায়।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঋণ থেকে প্রকৃত আয় না হলেও কাগজে-কলমে মুনাফা দেখিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া হয় এবং সরকারকে করও পরিশোধ করা হয়। এতে ক্ষতির বোঝা আরও বেড়ে যায়। এখন একদিকে ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে আমানতকারীরা টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক টালমাটাল অবস্থায় পড়ে যাচ্ছে। উচ্চ সুদে ধার নেওয়া টাকার বিপরীতে অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
তবে ব্যাংকের নতুন কর্তৃপক্ষ কিছুটা আশার কথা জানাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর সাড়ে ৭ লাখ নতুন হিসাব খোলা হয়েছে এবং জমা হয়েছে ৩ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। এ সময়ে ২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা ঋণ আদায়ও হয়েছে। এছাড়া ২৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায়ে মামলা চলছে।
ব্যাংকের চলতি দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহীয়া বলেন,
“ঋণের বড় অংশ আদায় করা যাচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংক পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি নতুন আমানত এনে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে।”