Friday, August 15
Shadow

প্রাণিসেবা এখন স্মার্টফোনে: খামারিদের জন্য ‘ডিজিটাল খামারি’ অ্যাপ

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন করে লক্ষ লক্ষ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে। তবে প্রাণিসম্পদ খাতটি এখনও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষ করে রোগ নির্ণয়, সঠিক চিকিৎসা, টিকা প্রয়োগ এবং তথ্যের অভাবে খামারিরা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এই প্রেক্ষাপটে ‘ডিজিটাল খামারি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ প্রাণিসেবায় এনেছে প্রযুক্তির নতুন বিপ্লব। বাংলাভাষায় নির্মিত এই অ্যাপটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।

অ্যাপটি খামারিদের জন্য সহজবোধ্য ও চিত্রসহ তথ্য দিয়ে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির রোগ সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে। এটি একটি সচেতনতামূলক ও শিক্ষামূলক অ্যাপ, যা খামারিদের প্রযুক্তির সহায়তায় নিজের খামারের সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিতকরণ ও প্রাথমিকভাবে সমাধানে সক্ষম করে তোলে।

অ্যাপটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সহজ ভাষা ও চিত্রভিত্তিক ফিচার। যেসব খামারি লেখাপড়ায় দুর্বল, তারাও ছবির মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করতে পারবেন। এতে গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস ও মুরগির সাধারণ ও জটিল রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। প্রতিটি রোগের সাধারণ চিকিৎসা পরামর্শ ও টিকা সংক্রান্ত তথ্যও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 

অ্যাপটির মাধ্যমে খামারিরা জানতে পারবেন, কোন রোগে কী লক্ষণ দেখা যায়, কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে, টিকা দেওয়ার সঠিক সময় ও স্থানীয় ভেটেরিনারি চিকিৎসকের খোঁজ। এতে প্রাণির মৃত্যু হার কমবে, চিকিৎসার খরচ বাঁচবে এবং খামারির আর্থিক ক্ষতিও হ্রাস পাবে।

অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক সহিদুজ্জামান বলেন, গ্রামাঞ্চলে পশু চিকিৎসকের অভাব প্রকট। অনেক সময় দূরবর্তী হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ডিজিটাল খামারি অ্যাপে স্থানীয় চিকিৎসকের নাম-ঠিকানাসহ যোগাযোগের তথ্যও রয়েছে, যা খামারিদের জন্য একটি বড় সুবিধা। খামারিরা এখন অ্যাপে জানতে পারেন, গরুর ওলান ফোলা কেন হয়, কৃমিজনিত রোগের লক্ষণ কী কিংবা ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রতিরোধসহ বিভিন্ন রোগ হলে করণীয় কী।

গুগল প্লে স্টোর হতে ‘Digital Khamari’ নামে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এরপর ইন্টারনেট ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে। এতে আরও যুক্ত করা হয়েছে, সচেতনতামূলক কনটেন্ট, রোগভিত্তিক চিকিৎসা নির্দেশনা এবং খামার ব্যবস্থাপনায় সহায়ক তথ্য।

অ্যাপটির নির্মাতা অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান আরো জানান, ভবিষ্যতে অ্যাপে লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল, আরও রোগভিত্তিক তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং প্রতিদিনের খামার ব্যবস্থাপনার ক্যালেন্ডার ফিচার যুক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে অ্যাপটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে যাতে এটি আরও ব্যবহারবান্ধব ও কার্যকর হয়।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের অর্থায়নে তৈরি এই অ্যাপ প্রাণিসেবা খাতে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ এবং গ্রামীণ উন্নয়নের বাস্তব উদাহরণ। এটি শুধু তথ্য নয়, একটি আত্মনির্ভর খামারি তৈরির সহায়ক হাতিয়ার। সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়লে তা খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান এবং পুষ্টি উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখতে পারবে। কারণ, একটি সুস্থ প্রাণি শুধু একটি পরিবারের নয়, একটি জাতিরও সম্পদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *