
কার্ত্তিক দাস, নড়াইল: বাড়ির পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। বর্ষাকালে মাঠটি পানিতে ডুবে থাকে। হাটু সমান পানি থাকায় মাঠে খেলার উপযোগি পরিবেশ ছিল না। যে কারণে আকাশ রায়ের বাড়ির উঠানকে বেছে নিয়েছিল খেলার জন্য।মাটির দেয়ালের ঘর । সেই দেয়ালে দাগ কেটে গোলপোষ্ট বানিয়ে খেলা করছিল কয়েক বন্ধু মিলে। আকাশ রায় ছিল গোলকিপার। সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। কে জানতো বৃষ্টির পানিতে দেয়াল ধসে পড়বে! সেই দেয়ালের নিচে মাটি চাপা পড়েছিল আকাশ। এতে তার মেরুদন্ডে প্রচন্ড আঘাত লাগে।বয়স তখন তার ৫/৬ বছর। ছেলেকে উন্নত চিকিৎসা করানোর মত তেমন আর্থিক সঙ্গতি ছিল না আকাশের বাবা রূপ কুমার রায়ের।
অগত্যা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করান তিনি।কয়েক মাস অপেক্ষার পর তেমন উন্নতি না দেখে বাবা রূপ কুমার মুষড়ে পরেন। এক পর্যায়ে ছেলেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি ধারদেনা করে নিয়ে যান ভারতের একটি হাসপাতালে। দূর্গা পূজা থাকায় চিকিৎসক দেখাতে ১০ দিন দেরি হয়। চিকিৎসক তার মেরুদন্ডের ভেতরে রড প্রবেশ করিয়ে অপারেশন করেন এবং অসুধ দিয়ে দেন। ওই চিকিসক ছয় মাস পরে মেরুদন্ডের ভেতর থেকে রড বের করে নিয়ে যেতে বলেন ।চিকিৎসক তখন বলেছিলেন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু ততক্ষণে আকাশের সব শেষ। হাটুর নিচ থেকে পা দুটো আস্তে আস্তে শুকিয়ে চিকন হয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের পাতার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
নড়াইল সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর গ্রামে তার বাড়ি। প্রতিবন্ধী জীবন নিয়েও দমে যায়নি আকাশ রায়। সে লেখাপড়ার হাল ছাড়েনি।হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি এবং আব্দুল হাই ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করে। বর্তমানে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। এখন তার বয়স ২২ বছর।
আকাশ জানায় জেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তাকে হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে। কৃষক পরিবারে আকাশের জন্ম। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ জন। দুই ভাই এক বোন। সকলেই লেখাপড়া করে।ভাই বোনের মধ্যে আকাশ বড়। বোন সরকারি মহিলা কলেজে প্রথম বর্ষে,ছোট ভাই ষষ্ঠ্ শ্রেণিতে পড়ে।এছাড়া পরিবারে বাবা-মা,দাদু ও ঠাকুমা রয়েছেন।কৃষি কাজের পাশাপাশি সীতারামপুর গ্রামে বাবার একটি চায়ের দোকান আছে।অবসর সময়ে আমি হুইল চেয়ারে বসে বাবার কাজে একটু সহযোগিতা করি। আকাশ রায় পরিবারের সকলের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
জানতে চাইলে রূপ কুমার রায় বলেন,অর্থাভাবে ছেলেকে আমি সময় মতো ভালো কোন চিকিৎসক দেখাতে পারিনি। তবে ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখিনি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন মনে হয় আমার কারণে ছেলেটার জীবন নষ্ট হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন হে ঈশ্বর তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমার সন্তানদের ভালো রেখ। কৃপা করো প্রভু।