
পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পাইকগাছা পৌরভবনের নির্মাণ কাজ। চার তলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ ছয় বছর আগে শুরু হয়। দুই বছর মেয়াদি ওই প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজের সময়সীমা তিন বছর পার হলেও এখনো পৌরভবন নির্মাণ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে। এ অবস্থায় জরাজীর্ণ সংকীর্ণ পুরতন ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পাইকগাছা পৌরসভা একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর নিজস্ব ভবনের জন্য পৌরসভার শিববাটি মৌজায় পাইকগাছা-কয়রা প্রধান সড়কের পাশে কেনা হয় সাড়ে ৪ বিঘা জমি। প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট পৌর ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন। আর কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে থমকে গেছে। এদিকে, প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর পর থেকেই তৎকালীন জরাজীর্ণ গদাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমানে পৌর ভবন শুরু হয় সকল কার্যক্রম।
এতটাই ভগ্ন দশা ছিল ওই ভবনের বৃহৎ অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমানে ছোট্ট একটি ভবনের অংশে চলছে পৌরসভার সকল কাজ। ছাদ, ব্যালকনি, সিঁড়ি ধ্বসে পড়েছে। ছোট্ট ছোট্ট পায়রা’র খুপরিতে চরম ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বড় ধরনের দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে।
বর্ষায় ছাদ চুয়ে পানিতে কম্পিউটার ও নথিপত্র নষ্ট
জরাজীর্ণ ভবনে ধ্বসে পড়ছে পলেস্তারা
### ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা
### নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত
জামানেত টাকা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে না
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর
মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স কে পৌরভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। ৪ তলা ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৯ শত ৩২ টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী সেতু নির্মাণের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর। সেই মেয়াদ তো বটেই, এরপর তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও পৌরভনের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।
এলাকাবাসী বলছেন, পৌর ভবন নির্মাণকাজ এখন থেমে আছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এনিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। বর্তমান পৌর ভবন সংকীর্ণ জায়গা। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা অথচ এর কার্যক্রম তৃতীয় শ্রেণির মতো। বর্ষাকালে পলিথিন টাঙ্গিয়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে কাজ করতে হয়। পানি কম্পিউটার সহ মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে থাকে।
৭৬ বছরের বৃদ্ধ সুরমান অভিযোগ করেন পৌর সভায় একটা কাজ নিয়ে এসেছিলাম। তিনতলায় এই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সাহস পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে ছাদ ভেঙে গায়ের উপর পড়বে।
৯নং আলামিন, রঞ্জনরা বলেন, পৌর ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। চৈত্রের এই দুপুর ১২ থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ভ্যাবসা গরমে তিন তালায় টিনের ছাউনিতে থাকা খুবই কষ্টকর। মাছের মতো হাসপাশ করতে হয়।
৫নং ওয়ার্ডের শুভংকর ব্যানার্জী তার বন্ধু কামাল কে নিয়ে পৌরসভার প্রায় দেড় হাত সুড়িপথ যাচ্ছি। হঠাৎ কার্নিশ ভেঙে তাদের পাশে পড়ে। অল্পের জন্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। পৌরসভার বেশি ভাগ কর্মচারীদের বক্তব্য আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাগরিক সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।
সম্পাদনের জন্য ঠিকাদারকে পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে সরকারি বরাদ্দ মোতাবেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু অতিরিক্ত ২০ লাখ টাকার কাজ পৌরসভার পূর্বে বরাদ্দকৃত সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ ৫ বার চিঠি চালাচালির পর মন্থর গতিতে কাজ চলছে। অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য ঠিকাদারকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে অন্যথা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পৌর প্রকৌশলী এম এম নূর আহম্মদ।
সরজমিনে দেখা যায়, চার তলা ভবনের তিন তলা পর্যন্ত কলাম ও ছাদ ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে অজুহাত দেখিয়ে তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়িয়েও নির্মাণাধীন চতুর্থ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। মূলত ঠিকাদার পৌর প্রকৌশলী সহ কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে পৌর ভবন নির্মাণের কাজ থমকে রয়েছে। পৌর নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি সহ নতুন পৌর ভবন দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।