Thursday, September 18
Shadow

নীলিমার নীল শহর

ইকবাল খান

ঢাকার ব্যস্ত শহর। রাস্তায় গাড়ির গুঞ্জন, মাথার ওপর ভ্যাপসা রোদ, আর ক্লান্ত মানুষের ভিড়। ঠিক এই শহরের ভেতরেই বাস করে এক মেয়ে—নীলিমা।

নীলিমা নামের মতোই সে ছিল অন্যরকম। চোখে স্বপ্ন, হাতে স্কেচবুক, আর কাঁধে একটা কাপড়ের ব্যাগ। সে ছিল শহরের একটা শান্ত কোণায় গড়া ছোট্ট আর্ট গ্যালারির শিক্ষিকা। প্রতিদিন সে শিশুদের রঙের ছোঁয়ায় পৃথিবীটা আলোকিত করতে শেখাতো।

একদিন গ্যালারির দরজায় হাজির হয় অনিক—ঢাকার নামী একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর। তার অফিস ছিল পাশেই, কিন্তু সে কখনো এই গ্যালারির ভেতরে পা রাখেনি।

সে দিন ছিল বৃষ্টির। ছাতা ছিল না অনিকের। গ্যালারির ছাউনির নিচে এসে দাঁড়িয়েছিল সে। তখনই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে নীলিমা।

– “ভিজে গিয়েছেন?”

– “হ্যাঁ… এই শহরে ছাতা না থাকলে ভালোবাসাও মুছে যায়,” অনিক হেসে বলেছিল।

নীলিমা একটু চমকে গিয়েছিল। হয়তো কথাটা গভীর ছিল, বা হয়তো চোখের সেই চাহনি।

তারপর শুরু হয় এক অদ্ভুত বন্ধুত্ব। গ্যালারির দেয়ালে রঙ মাখে, ছুটির দিনে ক্যাফেতে বসে আঁকায় ডুবে যায়, গল্পে গল্পে সময় হারায়।

কিন্তু শহরের নিয়মে সবাই থেমে যায় একদিন। অনিকের বিদেশে চাকরির অফার আসে। যাওয়ার আগের রাতে সে নীলিমাকে দেখে বলে:

– “তুমি তো শুধু ছবি আঁকো না… আমার জীবনটা রঙিন করে দিয়েছো। কিন্তু তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে?”

নীলিমা হেসে বলেছিল—

– “আমার শহর, আমার বাচ্চারা… সবই এখানে। কিন্তু তুমি যদি কখনো ফিরে আসো, আমি ঠিক এখানেই থাকব। একদম আগের জায়গায়, এই নীল শহরে।”

অনিক চলে যায়। আর নীলিমা?

সে এখনো প্রতিদিন সেই গ্যালারির জানালায় বসে। চোখে রঙ, মনে অপেক্ষা। কারণ ভালোবাসা কখনো ফুরায় না—শুধু শহরের মতো একটু জটিল হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *