
খ,ম,জায়েদ হোসেন,নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া) প্রতিনিধিঃ কৃষিপ্রধান জেলা ব্রাহ্মণবাড়ীয়া খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে কৃষি নির্ভর জেলা নামেও পরিচিত। এখানে সব ধরনের ফসল ও শস্য উৎপাদন হলেও দেশের মোট উৎপাদিত ধানের সিংহভাগই হয় এ জেলায়। তবে এ জেলার নাসিরনগর উপজেলায় ধান,সহ অন্যান্য ফসলের আবাদ বেশি হলেও দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। ফলে কয়েক বছরে ধীরে ধীরে এ উপজেলায় কমেছে সরিষা চাষ।
সরিষা লাভজনক ফসল হলেও কৃষকেরা বলছেন আগ্রহ হারানোর পেছনে অন্যতম কারণ উৎপাদন খরচের তুলনায় মুনাফা না পাওয়া এবং ইরি ধানের প্রভাবে দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে সরিষা চাষ। এদিকে কৃষি অধিদপ্তর মনে করছে, অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে সরিষা লাভজনক ফলন ও মুনাফা না হওয়ায় সরিষা চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ ইমরান হোসাইন জানান, সরিসা চাষে তুলনামূলক সেচ কম লাগে এবং অল্প সময়ে ফসল উত্তোলন করা যায়, যার ফলে ধীরে ধীরে আগ্রহী কৃষকদের সংখ্যা বাড়ছে।
এছাড়া কৃষি বিভাগ সরিষা চাষীদের প্রশিক্ষণ, সরকারী প্রনোদনা, প্রদর্শনী,
ফিল্ড টেকনোলজি ওরিয়েন্টেশনের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের পাশে থেকে উৎপাদন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
নাসির নগর উপজেলায় দিন দিন সরিষা চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, এমনকি ফলন কম হওয়ার কারণে সরিষা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা।
নানাবিধ কারণে এ উপজেলার সরিষা চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত দিনে এ উপজেলায় সরিষা চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বর্তমান সময়ে সরিষা চাষে কৃষকরা অনাগ্রহী।
এ উপজেলার কৃষকরা মনে করেন সরিষা চাষের চেয়ে অন্য ফসল চাষ করে তুলনামূলকভাবে অনেক লাভবান হওয়া যায়। সেজন্য সরিষার পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করছেন।
উপজেলার ফান্দাউক,বুড়িশ্বর, চাপরতলা,গুনিয়াউক,ধরমন্ডল ইউনিয়নে সরিষার চাষ চলমান থাকলেও অন্যান্য ইউনিয়নে আগের মতো সরিষা চাষ হয় না বলেই চলে।
নাসির নগর সদর ইউনিয়নের কলেজ পাড়ার কৃষক মোঃ শাহ আলম বলেন, আমি বিগতদিনে সরিষা চাষ করতাম। সরিষা চাষ লাজনক ও বটে,কিন্তু বিদৃন্ত মাঠ জুড়ে ইরি ধান চাষের ফলে এখন আর সরিষা চাষ করা হয় না।
উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের কৃষক মতি মিয়া বলেন, আমি সাধারণত ধানের আবাদ বেশি পরিমানে করে থাকি। কিন্তু এবার অল্প জমিতে সরিষা চাষ করেছি নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য।
এছাড়া অন্যান্য উপজেলার একাধিক কৃষক জানান, সরকারিভাবে তারা সহযোগিতা পেলে ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষ করতে পারবেন। ধান চাষের উপর কৃষকদের আগ্রহ ও ফলন বৃদ্ধি করতে যেমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে, একইভাবে কৃষকদের সরিষা চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিলে চাষে আগ্রহী হবেন কৃষকরা।
কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে সরিষা চাষ কমে গেছে। প্রদর্শনীর আয়োজন করে কিছু চাষিকে সার ও সরিষা বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া এ বছরে সরিষা চাষের উপর কৃষকের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা কৃষকদের দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষের উপযোগী জমিতে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষ ও উচ্চ ফলনশীল ইরি ধান চাষে,সরিষা চাষ কমে যাওয়ার একটি কারণ।
