
প্রায়শই দেখা যায়, কোনো নতুন পুকুর বা পাহাড়ের চূড়ায় থাকা বিচ্ছিন্ন হ্রদে হঠাৎ করেই মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে, যদিও সেখানে মাছ পৌঁছানোর কোনো সরাসরি পথ নেই। কীভাবে এটি সম্ভব হয়? বহু বছর ধরে এই রহস্য জীববিজ্ঞানীদের কৌতূহল জাগিয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা এই ধাঁধার একটি চমকপ্রদ উত্তর খুঁজে পেয়েছে: এর পেছনে রয়েছে হাঁসের, বিশেষ করে মল্লার্ড হাঁসের হজমশক্তির এক অসাধারণ ক্ষমতা।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে অনুমান করে আসছিলেন যে, পাখি বা অন্যান্য প্রাণী জলাশয় থেকে জলাশয়ে মাছের ডিম বহন করতে পারে। তবে, এটি কীভাবে ঘটে, তা নিয়ে বিস্তারিত প্রমাণ ছিল সীমিত। ২০১৯ সালে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (PNAS)’ জার্নালে প্রকাশিত একটি যুগান্তকারী গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তারা দেখেন, কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির মাছের ডিম মল্লার্ড হাঁসের হজম প্রক্রিয়াতেও অক্ষত থাকতে সক্ষম।
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যখন মল্লার্ড হাঁস কিছু প্রজাতির মাছের ডিম (যেমন – কার্প বা ক্রুসিয়ান কার্পের ডিম) খেয়ে ফেলে, তখন সেই ডিমগুলির একটি অংশ তাদের হজমতন্ত্রের কঠোর পরিবেশ (অ্যাসিড এবং হজমকারী এনজাইম) এবং যান্ত্রিক চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে পারে। ডিমগুলোর এই প্রতিরোধী ক্ষমতা এমন যে, হজম প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেও সেগুলো অক্ষত অবস্থায় মলের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে আসে।
যখন হাঁস এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে উড়ে যায় এবং সেখানে মলত্যাগ করে, তখন যদি সেই মল জলের কাছাকাছি বা সরাসরি জলে পতিত হয়, তবে অক্ষত মাছের ডিমগুলো উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে ফুটে ওঠে এবং সেখান থেকে নতুন মাছের জন্ম হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিচ্ছিন্ন পুকুর বা হ্রদে নতুন মাছের প্রজাতি বসতি স্থাপন করতে পারে, যা আগে ব্যাখ্যা করা কঠিন ছিল।
এই আবিষ্কার শুধু বিচ্ছিন্ন জলাশয়ে মাছের আবির্ভাবের রহস্যই উন্মোচন করেনি, বরং এটি বাস্তুতন্ত্রে (ecosystem) প্রজাতির বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকেও তুলে ধরেছে। এটি দেখায় যে, পাখি কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ জীবের বিস্তারে অপ্রত্যাশিতভাবে বড় ভূমিকা পালন করে। এই গবেষণা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের জটিল আন্তঃসম্পর্ক এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে আরও প্রসারিত করেছে।
