Saturday, November 15
Shadow

নতুনকুড়ি প্রতিযোগিতায় কৌতুকে দেশসেরা যশোরের সাবিক সাদত

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর:

বাংলাদেশ টেলিভিশনের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী শিশু প্রতিভা অন্বেষণমূলক অনুষ্ঠান ‘নতুনকুড়ি’-এর এবারের আসরে কৌতুক ‘ক’ শাখায় দেশসেরা হয়েছে যশোরের সাবিক সাদত। সোমবার বিকেলে রাজধানীর রামপুরায় বিটিভি ভবনের ৪ নম্বর স্টুডিওতে জমজমাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল রাউন্ড। সেখানে সারা দেশের বাছাইকৃত পাঁচ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ে এই কিশোর প্রতিভা।

রেকর্ডিং শুরু হওয়ার অনেক আগেই স্টুডিও প্রাঙ্গণে ভিড় জমান প্রতিযোগীদের অভিভাবক, নির্মাতা, প্রযোজক এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা। আলো-ঝলমলে স্টুডিও সেটে সাজানো ছিল প্রতিযোগিতার বিশেষ মঞ্চ। প্রতিটি শিশু প্রতিভাই প্রস্তুত ছিল তার সেরা পারফরম্যান্স দেখানোর জন্য। কৌতুক বিভাগে প্রতিযোগীদের সংলাপ তুলে ধরা, মঞ্চ ব্যবহারের কৌশল, চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার দক্ষতা এবং হাস্যরস সৃষ্টির ক্ষমতাই ছিল মূল মূল্যায়নের কেন্দ্র।

সাবিক সাদত মঞ্চে ওঠার মুহূর্ত থেকেই তার আত্মবিশ্বাসপূর্ণ উপস্থিতিতে দর্শকদের মনোযোগ কেড়ে নেয়। স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়, চমৎকার টাইমিং, সংলাপের নিখুঁত উপস্থাপন এবং দর্শক ও বিচারকদের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ—সবমিলে তার পরিবেশনা ছিল মুগ্ধ করার মতো। অভিনয়শৈলীতে স্বাভাবিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি চরিত্রের গভীরতা তুলে ধরার দক্ষতাও সে দেখিয়েছে। তার পারফরম্যান্সে উপস্থিত সবাই উপলব্ধি করেন, সে এই প্রতিযোগিতায় বিশেষ কিছু করতে যাচ্ছে।

বিকেলের শেষ প্রহরে ফলাফল ঘোষণা করা হলে স্টুডিওজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সাবিকের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো স্টুডিও ফ্লোর। পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী, বিচারক এবং সহপ্রতিযোগীদের শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসে এই কিশোর।

সাবিক সাদত দৈনিক লোকসমাজের চিফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান এবং শিক্ষক শারমিন আক্তার শিউলীর একমাত্র সন্তান। সাংবাদিকতা ও শিক্ষা–দুটি দায়িত্বপূর্ণ পেশায় থাকা পরিবার হওয়া সত্ত্বেও সন্তানকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এগিয়ে নিতে তারা শুরু থেকেই নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে গেছেন। ছোটবেলা থেকেই সাবিক নানা অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, অনুকরণ এবং মঞ্চে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলার মধ্য দিয়ে নিজের ব্যতিক্রমী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছে।

তার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, “ছোটবেলায় যেকোনো অনুষ্ঠানে ওকে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিলে সে নিজে থেকেই দর্শকদের হাসাতে পারত। আমরা কখনো চাপ দিইনি; শুধু উৎসাহ দিয়েছি। আজকের অর্জন আমাদের গর্ব।”

মা শারমিন আক্তার শিউলী বলেন, “সাবিক প্রতিদিন অনুশীলন করেছে। পড়াশোনা, স্কুল, সাংস্কৃতিক কাজ—সবকিছু ব্যালেন্স করে সে এই পর্যায়ে পৌঁছেছে। তার ইচ্ছা এবং সাহস আমাকে প্রতিদিন নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছে।”

বিচারকরা জানিয়েছেন, কৌতুক অভিনয়ে সাবিকের গতি-প্রকৃতি অত্যন্ত স্বাভাবিক, যা ছোটবেলার প্রতিভাদের মধ্যে দেখা বিরল। তার সংলাপ প্রক্ষেপণ, হাসি-ঠাট্টার ধরন, মঞ্চপ্রকরণ এবং চরিত্রের আবেগ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এক বিচারক বলেন, “আগামী দিনে অভিনয়ের যেকোনো মাধ্যমেই সে উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে—এটা সাবিক আজই প্রমাণ করেছে।”

যশোর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সাবিকের এই অর্জন নিয়ে বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষক, সামাজিক ও পেশাজীবী নেতারা বলেন, যশোর বরাবরই সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ অঞ্চল। সাবিকের সাফল্য সেই ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করবে। তারা মনে করেন, সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে সাবিক ভবিষ্যতে টিভি নাটক, শিশুতোষ অনুষ্ঠান, মঞ্চে অভিনয় কিংবা উপস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠতে পারে।

ফাইনাল শেষে সাবিক জানায়, “আমি খুব আনন্দিত। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি আরও ভালো কাজ করতে চাই।” তার নিষ্পাপ মুখে উচ্ছ্বাসের হাসি দর্শক ও বিচারকদের মন আরও ভরিয়ে দেয়।

বিটিভি কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুনকুড়ির এবারের বিশেষ পর্ব খুব শিগগিরই প্রচারে আসবে। দেশের নানা প্রান্তের দর্শক তখন দেখতে পারবেন কৌতুক পরিবেশনে সাবিকের অসাধারণ পারফরম্যান্স ও তার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যাত্রা।

সাবিক সাদতের এই সাফল্য শুধু একটি পরিবারের আনন্দ নয়; বরং যশোর তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন, যা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে দেশজুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *