
প্রথমবারের মতো ইঁদুরের মস্তিষ্কের উচ্চ-রেজল্যুশনের টু-ফোটন ইমেজিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন চীনা বিজ্ঞানীরা। নতুন উদ্ভাবিত ক্ষুদ্রাকৃতির টু-ফোটন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে এ ছবি তোলেন তারা। গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল নেচার মেথডসসে।
মানব মস্তিষ্কে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন নিউরন ও সেগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ট্রিলিয়ন সিন্যাপস। এগুলোর কার্যকলাপের গতিশীল পরিবর্তন সঠিকভাবে ধরতে পারাটা ছিল দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ। টু-ফোটন মাইক্রোস্কোপি এ ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কারণ এটি উচ্চ রেজল্যুশনে মগজের গভীরে ছবি তোলার সুবিধা দেয়।
২০১৭ সালে পিকিং ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল বায়োমেডিকেল ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক ছ্যং হপিংয়ের নেতৃত্বে চীনা গবেষকরা প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির টু-ফোটন মাইক্রোস্কোপ তৈরি করেছিলেন। সেটির মাধ্যমে মুক্তভাবে চলাফেরা করা ইঁদুরের মস্তিষ্কে কার্যকর সিন্যাপস ইমেজিং সম্ভব হয়।
তবে এর বড় সীমাবদ্ধতা ছিল—এর জন্য ব্যবহৃত ‘হলো-কোর ফাইবার কেবল’ একক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার পালস পাঠাতে পারত। এতে একাধিক রঙের ছবি তোলা সম্ভব হতো না।
ছ্যং ও ওয়াং আইমিনের নেতৃত্বে পিকিং ইউনিভার্সিটি এবং বেইজিং ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির উ রানলংয়ের নেতৃত্বে গবেষক দল যৌথভাবে এক নতুন ধরনের আল্ট্রা-ব্রডব্যান্ড ‘হলো-কোর ফাইবার’ তৈরি করেন। এটি একাধিক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (৭০০ থেকে ১,০৬০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত) অতিদ্রুত লেজার পালস বহন করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তি দিয়েই তৈরি হয় নতুন ক্ষুদ্র মাইক্রোস্কোপ। যার ওজন মাত্র ২.৬ গ্রাম।
গবেষকরা আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ইঁদুরের মাথায় এই মাইক্রোস্কোপ স্থাপন করে একসঙ্গে তিন রঙে (লাল, সবুজ ও নীল) স্নায়ুকোষের ক্যালসিয়াম সংকেত, মাইটোকন্ড্রিয়ার ক্যালসিয়াম সংকেত এবং প্লাক জমাটের গতিশীল ছবি ধারণ করতে সক্ষম হন। এতে দেখা যায়, রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই প্লাকের কাছে অস্বাভাবিক কোষীয় কার্যকলাপ ঘটছে।
উ রানলং বলেন, ‘এটি যেন সরাসরি সম্প্রচারিত রঙিন চিত্র—যেখানে স্নায়ুকোষ ও অঙ্গাণুর গতিশীল কার্যকলাপ একসঙ্গে দেখা যায়।’
আগে সীমিত প্রযুক্তির কারণে কেবল এক ধরনের কোষ দেখা যেত। এখন বিভিন্ন রঙের ফ্লুরোসেন্ট মার্কার ব্যবহার করে একই সঙ্গে একাধিক কোষের কার্যক্রম ও তাদের পারস্পরিক সমন্বয় স্পষ্টভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কের কর্টেক্সে ৮২০ মাইক্রোমিটারেরও গভীরে স্নায়ুকোষীয় ক্যালসিয়াম সংকেত ও গঠনগত ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন—যা ক্ষুদ্র টু-ফোটন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর ইমেজিং হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে এই মাইক্রোস্কোপ বড় আকারের ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ থেকে অতিসূক্ষ্ম উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তৈরি করতে পারে।
সূত্র: সিএমজি