Tuesday, September 16
Shadow

তোমার অপেক্ষায় নাঈম

একেএম নাজমুল আলম 

বর্ষার সন্ধ্যা। আকাশে গর্জে উঠছে মেঘ, ঝিরঝির করে পড়ছে বৃষ্টি। ঢাকার ব্যস্ত শহরের এক কোণে বসে নাঈম আজও অপেক্ষা করছে। প্রতিদিনের মতোই। হাতে একটা ছাতা, পাশে দু’কাপ কফি।

ছয় বছর হয়ে গেল তৃণা নেই। সেই তৃণা, যার মুখ দেখে নাঈম প্রথম প্রেমে পড়েছিল।

তৃণাকে প্রথম দেখেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। চোখে ভারি চশমা, কানে হেডফোন, হাতে একটা উপন্যাস — ‘হুমায়ূন আহমেদের “নন্দিত নরকে”’। মেয়েটার চেহারার চেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছিল তার একাগ্রতা। কয়েকদিন পর সাহস করে পাশে বসেছিল নাঈম।

– “হ্যালো! তুমি কী পড়ছো?”

তৃণা তাকিয়েছিল এক ঝলক, হালকা হাসি দিয়ে বলেছিল, “তোমাকে পড়ছি না, সেটা নিশ্চিত।”

এই শুরু। এরপর প্রেমটা জমে উঠতে সময় লাগেনি। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট, বইমেলা, লালবাগ কেল্লা, আজিমপুরের রিকশাভ্রমণ — সবখানেই ছিল তাদের গল্প।

কিন্তু জীবন গল্পের মতো সহজ না।

তৃণার পরিবার থেকে বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। কারণ নাঈম তখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। চাকরির চেষ্টায় ব্যস্ত, স্বপ্ন বড়… কিন্তু পকেট ছোট।

তৃণা কিছু না বলেই একদিন হারিয়ে যায়। ফোন বন্ধ, সোশ্যাল মিডিয়া ডিঅ্যাক্টিভ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও ছেড়ে দেয়।

নাঈম ভেঙে পড়ে। কিন্তু হাল ছাড়েনি।

সে দিনরাত পরিশ্রম করে আজ একজন সফল স্থপতি। ঢাকার উত্তরায় নিজের অফিস, নামডাকও হয়েছে। কিন্তু মনটা ফাঁকা। কারণ তৃণা নেই।

ছয় বছর ধরে প্রতি শুক্রবার বিকেলে ‘রেইনকফি’ নামের সেই পুরনো কফিশপে সে অপেক্ষা করে। কারণ ওখানেই একদিন তৃণা বলেছিল –

– “যদি কখনো হারিয়ে যাই, বৃষ্টির দিনে এই কফিশপেই খুঁজবে আমায়।”

আজও তেমনই এক বৃষ্টির বিকেল।

নাঈম দুই কাপ কফি নিয়ে বসে আছে। এক কাপ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, অন্যটা হাতে।

হঠাৎ দরজার ঘণ্টা বাজে।

বৃষ্টিভেজা কাঁচে আবছাভাবে ভেসে উঠে এক চেনা মুখ।

তৃণা!

চুলগুলো ভেজা, চোখে সেই পুরনো চশমা, কাঁপা ঠোঁটে শুধু বলে,

– “তুমি এখনো কফিশপে আসো?”

নাঈম হাসে। তার চোখে জল, ঠোঁটে শুধু একটাই শব্দ —

– “তুমি আসবে বলেছিলে তো।”

তৃণা সামনে বসে, তার কাঁপা হাতে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া কাপটা তুলে নেয়। কফির গন্ধে আরেকবার তাদের প্রেম শুরু হয়, কিন্তু এবার আর কেউ কাউকে হারাতে চায় না।

নাঈম তৃণার দিকে তাকিয়ে বলল,

– “এবার হারালে বেঁচে থাকবো না, তৃণা।”

তৃণা চুপচাপ তার হাত ধরে।

বাইরে তখনো বৃষ্টি।

আর ভেতরে দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকা, যারা শেষ পর্যন্ত আবারও একসাথে — সময়কে, ব্যথাকে আর বাস্তবতাকে হার মানিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *