
ডা. মোঃ হুমায়ুন কবীর
জরায়ুর ফাইব্রয়য়েড টিউমার বলতে জরায়ুর প্রাচীরের টিউমারকে বোঝায়। জরায়ু নারীর প্রজননতন্ত্রের অংশ, যার প্রধান কাজ সন্তান ধারণ করা। ফাইব্রয়েড টিউমার একটি বিনাইন বা নির্দোষে টিউমার, যা সাধারণত বিপজ্জনক নয় কিংবা ঔ টিউমার ক্যান্সার সৃষ্টি করে না। রোগটি ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। তবে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যেও সমস্যাটি হতে পারে। বেশিরভাগ জরায়ু ফাইব্রয়েডের ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ থাকে না।
প্রকার:
জরায়ুর ফাইব্রয়েডগুলোকে তাদের অবস্থানের উপর ৩ প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। যথা:
ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েডস : এ জাতীয় টিউমার জরায়ুর পেশীগুলোর ভেতরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
সাবসারোসাল ফাইব্রয়েড : এগুলো জরায়ুর বাইরের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড : এগুলো জরায়ুর আস্তরণের নীচে এবং জরায়ু গহ্বরের ভেতরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
আকার
ছোট জরায়ু ফাইব্রয়েড টিউমার বলতে ১-৫ সেমি এর কম আকারের টিউমার
মাঝারি জরায়ুর ফাইব্রয়েড টিউমার বলতে ৫-১০ সেমি আকারের টিউমার
বড় ফাইব্রয়েড টিউমার বলতে ১০ সেমি বা তার বেশী আকারের টিউমার।
কারণ
এ ধরনের টিউমার সৃষ্টির কারণ এখনো পর্যন্ত অজানা, তবে ফাইব্রয়েড হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায় এমন কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। জিনগত ত্রুটির কারণে মাসপেশির কোষে জিনগত পরিবর্তনের কারণে হয় বলে মনে করা হয়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণেও ফাইব্রয়েড সৃষ্টির জন্য দায়ী। অন্যান্য কারণ যেমন: তাড়াতাড়ি মাসিক শুরু হওয়া, স্থুলতা, হাইপোথাইরয়েডিজম, কিছু খাদ্যাভ্যাসও জরায়ু ফাইব্রয়েডের সৃষ্টির জন্য দায়ী
কাদের বেশি হয়?
যাদের অল্প বয়সে মাসিক শুরু হয়
নিঃসন্তান
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস)
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগটি বাড়ে
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ
পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
আফ্রিকান, আমেরিকান মহিলাদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রবণতা বেশি দেখা যায়
পরিবারে যদি কারো এ রোগ হয়ে থাকলে অন্য সদস্যদের ও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
লক্ষণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থাৎ প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে কোন উপসর্গ দেখা যায় না
অস্বাভাবিক মাসিক চক্র
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া
পেট ব্যথা ও পেটে চাকা অনুভূত করা
সন্তান ধারণে অক্ষমতা, বন্ধ্যত্ব গর্ভস্রাব কোষ্টকাঠিন্য
প্রস্রাব নিঃসরণে সমস্যা ও অনেক সময় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
পিঠে ও পায়ে ব্যথা
ব্যথাযুক্ত যৌনমিলন।
জটিলতা
সঠিক চিকিৎসা না করলে এ ফাইব্রয়েড গুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিভিন্ন জটিলতা তৈরী করতে পারে। যেমন:
প্রতি মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত
সংক্রমণ সৃষ্টি হওয়া, টিউমারের ভেতরে পচন ধরা
টিউমারের আবরণে রক্তপাত হওয়া
প্যাঁচ লেগে প্রচন্ড পেট ব্যথা হওয়া
ঘন ঘন প্রস্রাব, মুত্রাশয় খালি করতে অসুবিধা
তীব্র ব্যথা বা জ¦র।
রোগ-নির্ণয়
রোগের সঠিক ইতিহাস জানা ও উপসর্গ জানা
আল্ট্রাসনোগ্রাফি
এম আর আই
হিস্টেরোস্কপি
পেলভিক পরীক্ষা।
চিকিৎসা
লক্ষণ না থাকলে চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। ৬ মাস পরপর নিয়মিত ফলোআপ, প্রতি ৩ বছর পরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফী করতে হবে।
লক্ষন থাকলে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করতে হবে। এক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। রক্তক্ষরণ হলে তা বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করে টিউমারের আকার সাইজ করা যেতে পারে।
প্রয়োজন অনুযায়ী জরায়ু ঠিক রেখে টিউমার অপসারণ করা যেতে পারে। যারা ভবিষ্যতে বাচ্চা নিতে চান তাদের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা কার্যকরী।
যাদের টিউমার বড় হয়ে গেছে চলিশোর্ধ্ব বয়সী কিংবা ভবিষ্যতে বাচ্চা নিতে চান না, তাদের ক্ষেত্রে জরায়ু অপসারণ করা যায়।
লক্ষণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ সেবন করা যেতে পারে। জরায়ুতে ফাইব্রয়েড বা টিউমার হলে অহেতুক ভয়ের কোন কারণ নেই। এ টিউমার হলে ক্যান্সারের কোন ঝুঁকি নেই। উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে এ রোগ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ভারী বা দীর্ঘস্থায়ী মাসিকের সাথে রক্তক্ষরণ
পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা বা চাপ
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রাশয় খালি করতে সমস্যা হওয়া
কোষ্টকাঠিন্য বা ব্লোটিং
বারবার গর্ভপাত বা ঊষরতা, প্রজননে সমস্যা দেখা দেওয়া।
প্রতিরোধ
অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়মিত শরীরচর্চা ও ডায়েট করা
তাজা শাকসবজি, ফলমূল, গোটা শস্য সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা সম্পূর্ণরুপে ত্যাগ করতে হবে
স্ট্রেসমুক্ত থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে গভীর শ্বাসের ব্যয়াম, ধ্যান, যোগব্যয়াম করা যেতে পারে
নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, গবেষক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার।
রেনেসাঁ হোমিও মেডিকেয়ার
২৫/৩, নবাব কাঁটারা, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা- ১০০০।
০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪।