
ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে। ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের এই হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, নতুন করে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সীমানা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলেও দাবি করেছে তেহরান।
তবে এসব হামলার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এরই মধ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ছয় দিন ধরে চলছে টানা পাল্টাপাল্টি হামলা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) আগেই জানিয়েছিল, ইরান থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে তারা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রেখেছে। আল-জাজিরার বরাতে জানা গেছে, এই হামলা মোকাবেলায় ইসরায়েলি নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তারা তেহরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানো শুরু করেছে। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বলেছে, রাজধানী তেহরানের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলীতে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে এবং উত্তর-পূর্ব তেহরানে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। কিছু সূত্র জানিয়েছে, লাভিজান এলাকাসহ তেহরানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশ এবং পাশ্ববর্তী কারাজ শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও ইসরায়েলের বিমান হামলা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—কারাজে অবস্থিত টিইএসএ (TESA) এবং তেহরান রিসার্চ সেন্টার। এই দুটি কেন্দ্রই এর আগে আইএইএর পর্যবেক্ষণাধীন ছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরান রিসার্চ সেন্টারে অ্যাডভান্সড লেভেলের সেন্ট্রিফিউজ রটরস উৎপাদন ও পরীক্ষার কাজ হতো। আর কারাজে অবস্থিত টিইএসএ-তে সেন্ট্রিফিউজের উপকরণ তৈরি হতো। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত এই সেন্ট্রিফিউজগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া, তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়েও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানানো হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস’ জানিয়েছে, ইরানজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ১,৩২৬ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলে সংগঠনটি দাবি করেছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা।
তবে ইরান সরকার সর্বশেষ গত সোমবার হতাহতের তথ্য দিয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১,২৭৭ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে ইরান সরকার নিয়মিতভাবে হতাহতের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যার পরিণতি গোটা অঞ্চলে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে।