Friday, May 30
Shadow

বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক বরফ গলতে শুরু করেছে। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে অনেক নাটকীয়তা ও আবেগঘন মুহূর্ত পার করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। আজ দিনের শেষ ভাগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকগুলোই ঠিক করে দেবে ড. ইউনূস তার পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল কীভাবে সাজাবেন।

গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের রাজনীতিতে যেমন নাটকীয়তা ছিল, তেমনি ছিল দ্বিধা ও সংশয়ের ঘনঘটা। পদত্যাগের হুমকিও ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সংকট তৈরি হলো কীভাবে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি সুপরিকল্পিত চক্র ড. ইউনূসকে ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলার কাজ করেছে। এই চক্রের প্রভাবেই রাজনীতির মূল শক্তি—বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—প্রথম থেকেই দূরে সরিয়ে রাখা হয়। একইসঙ্গে অভ্যুত্থানের আরেক বড় শক্তি, সশস্ত্র বাহিনীকেও পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্ধকারে রাখা হয়। এমনকি শিক্ষার্থী ও তরুণ সমাজের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টি হয়, যা অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ব্যাহত করে।

ফলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে অভ্যুত্থান-সমর্থকদের মধ্যেই অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণেই শুরু হয় সমঝোতার চেষ্টা। এখন পদত্যাগের প্রস্তুতি নেই, বরং নতুন করে কৌশল সাজানো হচ্ছে—যেমনটা দাবার খেলায় দেখা যায়, যখন রাজা চেকমেট হয়ে পড়লে আবার ঘুঁটি সাজাতে হয়।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমানে সেই ‘ঘুঁটি সাজানোর’ সময় চলছে। সরকারের অভ্যন্তরে যারা গোপনে ভিন্ন মতলবে কাজ করছিলেন, তারা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত তিন থেকে চারজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সমঝোতার অংশ হিসেবে বিদায় নিতে হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ড. ইউনূস একজন দক্ষ ব্যাংকার, সফল এনজিও উদ্যোক্তা এবং সাবলীল বক্তা হলেও রাজনীতির ময়দানে তিনি এখনও পরিপক্ক নন। এ কারণে একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। যদিও কিছুদিন আগে তিনি পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাস্তবতা বলছে—এ মুহূর্তে তা সম্ভব নয়। তার নেতৃত্বে প্রশাসন এখন সামনে কীভাবে এগোবে, সেই ভাবনাতেই রয়েছে।

এমনকি নির্বাচন প্রসঙ্গেও এখন পরিষ্কার বার্তা মিলছে—নির্বাচন হবে ডিসেম্বরেই। এটি আর বিলম্বিত হবে না। কারণ, নির্বাচন পেছালে সংকট আরও গভীর হবে এবং পর্দার আড়ালের অশুভ শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠবে। ফলে নির্বাচনই হারিয়ে যেতে পারে জাতীয় দৃষ্টিপট থেকে।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রমাণ মিলেছে যে, সরকারবিরোধী একটি চক্র সরকারের ভেতরে থেকেই নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তবে সাম্প্রতিক পালাবদল সেই চক্রের ভিত অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন ড. ইউনূসের সামনে আর পেছনে তাকানোর সময় নেই। তাকে স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে—কে বন্ধু আর কে শত্রু।

তার বিদেশি বন্ধুরাও এখন সতর্ক অবস্থানে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, বরং সারাদেশকে কেন্দ্র করে সরকার পরিচালনা করতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যদের বড় একটি অংশ মাঠে না গিয়ে শুধু রাজধানীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বাস্তব পরিস্থিতি ও জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

যদি ড. ইউনূস একটি শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার গঠন করতে চান, তাহলে প্রথমেই নিজের পরিসরটা গুছিয়ে নিতে হবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তেমনই একটি বার্তা বহন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *