
নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের কৃষকেরা এখন ধান ছাড়িয়ে ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ধানের তুলনায় কম খরচে চাষ, ভালো ফলন ও বাজারে উচ্চ চাহিদার কারণে ভুট্টা চাষ করে ক্রমেই লাভবান হচ্ছেন তারা। এতে করে এ অঞ্চলে ভুট্টা একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসলে পরিণত হচ্ছে।
উত্তর শংকরপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, মাত্র তিন বছর আগেও তিনি বোরো ধান চাষ করতেন। তবে উৎপাদন খরচ বেশি এবং ফলন কম হওয়ায় লোকসানে পড়তে হতো। তাই তিনি ধান চাষ ছেড়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। এ বছর তিনি ৯০ কাঠা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তার ভাষায়, “ভুট্টার ফলন ভালো, খরচ কম, লাভ বেশি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ ফসলে লোকসানের ঝুঁকি অনেক কম।”
শুধু আবুল কাশেমই নন, একই গ্রামের আরও অনেক কৃষকই ধান থেকে সরে এসে ভুট্টা চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন। তাদের মতে, ধানের তুলনায় ভুট্টা চাষে সেচ, সার ও কীটনাশকের খরচ কম হওয়ায় চাষাবাদ সহজ এবং লাভজনক।
গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, “বড় পরিসরে চাষাবাদকারীদের আমরা বীজ দিতে না পারলেও সার্বক্ষণিক প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে থাকছি, যাতে তারা ভালো ফলন পেতে পারেন।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস জানান, “ধান চাষে অনেক বেশি সেচের প্রয়োজন পড়ে, যেখানে ভুট্টা চাষে তুলনামূলকভাবে কম সেচেই ফলন ভালো হয়। বাজারে ভুট্টার চাহিদা বেশি, ফলে কৃষকরা এতে লাভবান হচ্ছেন। ধান ছেড়ে যারা ভুট্টা চাষে গেছেন, তাদের কারণে সার্বিক খাদ্য উৎপাদনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।”
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বাসসকে জানান, “নেত্রকোণার দুটি পাহাড়ি উপজেলা—দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা—পানির সংকটাপন্ন এলাকা। এসব এলাকায় পানির কম ব্যবহারে চাষ করা যায় এমন ফসল—যেমন ভুট্টা, বাদাম ও শাকসবজি—চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিছু প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে ভুট্টা ও বাদামকে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রদর্শনী প্রকল্পের মাধ্যমে এসব ফসলের সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।”
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দুর্গাপুর উপজেলায় প্রায় ২৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। মূলত গো-খাদ্য ও বিভিন্ন খাদ্যপ্রক্রিয়াজাত শিল্পে ব্যবহারের জন্য ভুট্টার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাছাড়া, ধান চাষে সেচের জটিলতা ও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ভুট্টার মতো বিকল্প ফসলই এখন কৃষকের কাছে লাভের মুখ দেখাচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে এবং বাজারে চাহিদা ও মূল্য স্থিতিশীল থাকে, তবে ভবিষ্যতে নেত্রকোনার কৃষিতে ভুট্টা একটি প্রধান অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে।