Thursday, May 8
Shadow

এ বছর আম উৎপাদন ও রপ্তানিতে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ এবার আম উৎপাদন ও রপ্তানিতে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন এই জনপ্রিয় ফলটির বিপুল উৎপাদন ও রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের আম এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, সৌদি আরবসহ অন্তত ৩৮টি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এবার প্রথমবারের মতো চীনের বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশের আম। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, “চীনের সঙ্গে আম রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং গত বছরের জুলাই মাসে জিএসিসি (General Administration of Customs of China) থেকে রপ্তানির নিবন্ধনও পেয়েছে বাংলাদেশ।”

তিনি আরও বলেন, “চীনের আমদানিকারকরা ইতোমধ্যে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট, প্যাকেজিং এবং অন্যান্য মান যাচাই করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জুন মাস থেকেই চীনে আম রপ্তানি শুরু করা সম্ভব হবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আমের উৎপাদন হয়েছিল ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন, যা পূর্বের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। অথচ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আম রপ্তানি কিছুটা কমে গিয়ে মাত্র ১,৩২১ মেট্রিক টনে এসে দাঁড়ায়। এর আগের বছর (২০২১-২২ অর্থবছর) রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১,৭৫৭ মেট্রিক টন।

রপ্তানি সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, “রাজশাহী, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের ১৫টি জেলায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদিত হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী ৫ মে সাতক্ষীরার গোপালভোগ আম দিয়ে মৌসুমের সূচনা হবে।”

এছাড়াও চীনা প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ আম উৎপাদক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশে প্রচলিত আমের জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ফজলি, ল্যাংড়া, হিমসাগর, গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাত, আম্রপালি, বারি আম (১-৯), মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, হাড়িভাঙ্গা, তোতাপুরী, কারাবাউ, সূর্যপূরী, লখনা, আদাইরা, রুপালি, আলফানসোসহ আরও অনেক জাত।

বর্তমানে আম উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তবে রপ্তানিতে আরও অনেক পিছিয়ে থাকলেও, উৎপাদন ও মান উন্নয়ন এবং নতুন বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে ভবিষ্যতে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বের শীর্ষ আম রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান, স্পেন, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ডস ও ইকুয়েডর। এর মধ্যে মেক্সিকো বছরে প্রায় ৪ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন আম রপ্তানি করে প্রথম স্থানে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসম্মত উৎপাদন, আধুনিক সংরক্ষণ ও পরিবহন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশও দ্রুত আম রপ্তানির তালিকায় শীর্ষস্থানীয় অবস্থান নিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ, বাজার গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে উৎপাদন সম্প্রসারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *