Wednesday, May 7
Shadow

হিসাব বিজ্ঞানের হাতেখড়ি

মোঃ জামাল হোসেন

ন্যাশনাল গার্লস মাদ্রাসা, ফেনী।

জে এস সি শেষ করে যারা নবম শ্রেণিতে হিসাব বিজ্ঞান পরিবারে পদার্পণ করবে বলে মনস্থির করেছ তাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং আজকের লেখা তোমাদের জন্য। হিসাব শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। শিক্ষা থাক বা না থাক সবাই একটু না একটু হিসাব করতে পারে। তাহলে হিসাব বিজ্ঞান কী? হিসাব বিজ্ঞান হল “ব্যবসায়ের একটি ভাষা” যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক লেনদেন হিসাবের বইতে সঠিক ভাবে লিখে রাখতে পারে এবং ঐ তথ্য থেকে নির্দিস্ট সময় শেষে আর্থিক লেনদেনের ফলাফল জানতে পারে।

আজ নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাব বিজ্ঞানে হাতেখড়ি দেয়ার জন্য মূল বিষয় সহজ ও ছোট করে তুলে ধরব। আশা করি এতে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ্‌।

    একজন কবি যেমন নদী নিয়ে কবিতা লিখার সময় কল্পনায় সে ঐ নদীর পাড়ে চলে যায় বা মনের চোখ দিয়ে সে নদীর মনোরম দৃশ্য দেখতে পায় তেমনি তোমাকে হিসাব বিজ্ঞান করার সময় কল্পনায় হতে হবে একজন ব্যবসায়ী বা দোকানদার। তোমাকে ভাবতে হবে তুমি তোমার দোকান বা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে বসে আছো।

   এবার চিন্তা কর দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিসাব করার সময় কি ঘটে? দেওয়া ও নেওয়া অর্থাৎ গ্রহণ ও প্রদান, তাইতো? এই দেওয়া ও নেওয়া বা গ্রহণ ও প্রদানকে বলে লেনদেন।

    লেনদেন তো অনেক রকমের হয়। যেমন, তুমি তোমার বন্ধুকে একটি বই দিলে আর তোমার বন্ধু তোমাকে একটি কমল উপহার দিল। এটি কি লেনদেন নয়? হ্যাঁ, এটিও একটি লেনদেন কিন্তু হিসাব বিজ্ঞানে লেনদেন এমন নয়। তাহলে কেমন হবে হিসাব বিজ্ঞানের লেনদেন? ঐ ঘটনাকে লেনদেন বলবো, যখন কোন আর্থিক ঘটনা ঘটবে অর্থাৎ যদি কোন আর্থিক ঘটনার দ্বারা দুটি পক্ষ আর্থিক ভাবে প্রভাবিত হবে তখন সেটি হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় লেনদেন হবে।

    ধর তুমি এখন দোকানে বা তোমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আছো। এখন খেয়াল কর কী কী লেনদেনের মাধ্যমে তোমার নিকট থেকে অর্থ বা পণ্য বা সম্পদ চলে যাচ্ছে অথবা তোমার নিকট আসছে। মানে গ্রহণ ও প্রদান এই দুটি ঘটনা ঘটছে।

     এই গ্রহণ ও প্রদান ঘটনাকে আমরা হিসাবের খাতায় প্রাথমিক ভাবে লিখে রাখার সময় দুটি শব্দ ব্যবহার করি “ডেবিট এবং ক্রেডিট”। লেনদেনটি লিখার সময় ডেবিট হবে নাকি ক্রেডিট হবে তা ঠিক করে নিতে হয় এবং ঐ অনুযায়ী হিসাবের খাতায় লিখতে হয়। এখন তোমাদের অনেকে কোন লেনদেন ডেবিট হবে আর কোন লেনদেন ক্রেডিট হবে তা বের করতে হিমসিম খাও। আর তাই সহজে “ডেবিট এবং ক্রেডিট” বুঝার জন্য নিচে একটি ছক দিলাম।

ডেবিট ক্রেডিট
সম্পদবৃদ্ধিসম্পদহ্রাস
দায়হ্রাসদায়বৃদ্ধি
মালিকানা স্বত্বহ্রাসমালিকানা স্বত্ববৃদ্ধি
খরচবৃদ্ধিআয়বৃদ্ধি

ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের জন্য কিছু নিয়ম মুখস্থ করে নেয়া জরুরী।

প্রথমত = যা আসে তা ডেবিট, যা চলে যায় তা ক্রেডিট।

দ্বিতীয়ত = সকল খরচ ও লোকসান ডেবিট, আর সকল আয় ও লাভ ক্রেডিট।

তৃতীয়ত = গ্রাহক ডেবিট, দাতা ক্রেডিট।

চতুর্থত = সম্পদ বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, সম্পদ হ্রাস হলে ক্রেডিট।

পঞ্চমত = দায় হ্রাস পেলে ডেবিট, দায় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট।

ষষ্ঠত = মালিকানা স্বত্ব হ্রাস হলে ডেবিট, মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট।

সপ্তমত = আয় হ্রাস পেলে ডেবিট, আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট।

এবার আমাদের জানা দরকার সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্ব কী?

সম্পদ = সম্পদ বলতে বুঝায় অর্থনৈতিক পরিসম্পদ। মানে যা ব্যবসায়ে মালিকের অধিনে থাকে এবং ব্যবসায়ে লাভ বা মুনাফা অর্জনে সাহায্য করে। যেমন- আসবাবপত্র, দালানকোঠা, কলকব্জা ইত্যাদি।

দায় = দায় হচ্ছে ব্যবসায়ের আর্থিক দায়বদ্ধতা। যা নির্দিষ্ট সময় পর অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। যেমনঃ ধর কারো কাছ থেকে তোমার ব্যবসায়ের জন্য টাকা ধার নিয়েছ এবং তা এক বছর পর তোমাকে পরিশোধ করতে হবে।

মালিকানা স্বত্ব =  ব্যবসায়ের মোট সম্পদ থেকে দায় বাদ দেয়ার পর যা থাকে তাই মালিকানা স্বত্ব। এই মালিকানা স্বত্বকে আবার চারটি উপাদান প্রভাবিত করে। তা হল – ১। মালিকের বিনিয়োগ, ২। আয়, ৩। উত্তোলন, ৪। ব্যয় বা খরচ।

এই আলোচনা থেকে আশা করছি তোমরা হিসাব বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণা পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *