
জামাল হোসেন : আমাদের মুসলিম সমাজে হিজাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই হিজাব নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকলেও কিছু ভুল ধারণাও আছে।
যেমন প্রথম ভুল ধারণা হলো হিজাব করবে নারীরা, পুরুষের আবার হিজাব আছে নাকি? আমাদের সমাজের প্রায় মুসলিম একথা বলে থাকেন। কিন্তু জানেন কি? আল্লাহ্ কোরআনে প্রথম কাদের হিজাব করতে বলেছেন। উত্তর হল – পুরুষদের। কোরআনে আল্লাহ্ বলছেনঃ “মমিনদেরকে বলুন, তারা জেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ্ তা অবহিত আছেন”। (সূরা আন-নুর, আয়াত- ৩০) আল্লাহ্ কোরআনে বলছেন আগে পুরুসদের হিজাব করার জন্য। পুরুষের সামনে কোন নারি আসলে আগে এই পুরুষকে দৃষ্টি নিচু করতে হবে। পুরুষকে তার গোপনাঙ্গের হেফাজত করতে হবে। আগে পুরুষকে ঠিক হতে হবে। নারীকে সন্মান করা শিখতে হবে। এটাই আল্লাহ্র নির্দেশ।
হিজাবের আরেক বড় ভুল ধারণা হল কালো বোরখা। আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ মনে করে হিজাব মানে কালো বোরখা। হিজাবের নামে এই কালো বোরখা যদি টাইটফিট হয় আর শরীরের সমস্ত নকশা বুঝা যায় তবে কি তাকে হিজাব বলা যাবে? আল্লাহ্ পুরুষকে হিজাবের কথা বলার পর পর বললেন নারীদের হিজাবের কথা একি সূরায় পরের আয়াতে। আল্লাহ্ বলছেনঃ “ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক আধিকারভুক্ত বাঁদি, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কার কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”। (সূরা আন-নুর, আয়াত- ৩১) আল্লাহ্ নারীদেরকে সুন্দরভাবে বলে দিলেন কিভাবে হিজাব করতে হবে, কিভাবে চলতে হবে। তাদের দৃষ্টি নত রাখতে হবে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করতে হবে শরীরের সাধারণ ভাবে যা প্রকাশ পায় যেমন মুখমণ্ডল এবং হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রেখে বাকি সব ঢাকতে হবে। বুকের উপর ওড়না এমন ভাবে দিতের হবে যাতে বুকের উঁচুনিচু অংশ না দেখা যায়। যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ তাদের ছাড়া কারও সামনে সৌন্দর্য প্রকাশ না করা। এর থেকে ভালো হিজাবের নিয়ম কে বলতে পারবে?
আমরা এতো উপন্যাস পড়ি, এতো বই পড়ি, কিন্তু আল্লাহ্র দেয়া শ্রেষ্ঠ সাহিত্য জীবন বিধান কি পড়ে দেখেছি? আমরা হিজাবের মূল কথাটাই বুঝিনি বা বুঝতে চাইনি। আমরা হিজাব বলতে সুধু কালো বোরখার উপর সীমাবদ্ধ হয়ে আছি। আমরা এটা অনেকেই জানি না যে রঙিন বা কালো আঁটসাঁট বোরখা কিন্তু হিজাব নয়। হিজাব করতে হবে আল্লাহ্ নির্দেশ মত। হিজাব নারী পুরুষ সবাইকে করতে হবে
১। সতর ভালোভাবে ঢাকতে হবে। পুরুষ নাভির নিচ থেকে পায়ের গোড়ালির উপর পর্যন্ত। নারী তার মুখমণ্ডল আর হাতের কব্জি খোলা রেখে বাকি সব ঢাকবে।
২। কাপড় পাতলা হবে না, কাপড় ভেদ করে ভিতরের শরীর যাতে না দেখা যায়।
৩। পোশাক টাইট হবেনা, এমন টাইট পোশাক পরা যাবেনা যা পরলে শরীরের উচু নিচু অংশ দেখা যায়।
৪। পোশাক এতোটা আকর্ষণীয় যাতে না হয় যে বিপরীত লিঙ্গ আকর্ষণ অনুভব করে।
৫। নারির পোশাক পুরুষ, পুরুষের পোশাক নারি পারবে না।
৬। অন্য ধর্মের ধর্মীয় পোশাক পরবে না।
আল্লাহ্ বলেনঃ “হে নবি আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু”। (সূরা আল-আহজাব, আয়াত- ৫৯) আল্লাহ্ কোরআনে হিজাবের উপকারিতাও বলে দিয়েছেন। হিজাব করলে নারিদের সহজে চেনা যাবে ফেলে কেও উত্যক্ত করবে না। এতো সুন্দর বিধান মাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কে দিতে পারবে?
পরিশেষে বলতে চাই হিজাবের নিয়ম মেনে যেকোনো পোশাক দিয়ে হিজাব করা যাবে। সমাজের ভুল ফতয়া এবং অন্ধ বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করে কোর