Thursday, July 24
Shadow

প্রশ্নঃ সূরা ফাতিহা আল্লাহর বানী নাকি মোহাম্মাদ (সাঃ) এর নিজের কথা?

উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে জেনে নেয়া যাক ওহী কী? ওহী হল আল্লাহর বানী যা আল্লাহ্‌ মানুষের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তাঁর মনোনীত বান্দার কাছে। এই মনোনীত বান্দারা বাকী সকল মানুষের মাঝে সেই বার্তা পৌছে দেন। এই সকল মনোনীত বান্দারাই হল নবী ও রাসুল।

এই ওহীর একটি হল কোরআন যা মোহাম্মাদ (সাঃ) এর উপর আল্লাহ্‌ নাযিল করেছেন। আরো একটি ওহী আছে, তা হল মোহাম্মাদ (সাঃ) এর বানী যা সাহহী হাদিস হিসাবে আমরা পাই।

এখন রাসুল (সা) এর বানী ওহী হল কীভাবে? এটা জানা দরকার। পবিত্র কোরআনের ৫৩ নং সূরা, আল-নাজমে আয়াত – ২ ও ৩, আল্লাহ্‌ বলেনঃ- “তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয় বিপদ্গামি ও নয়। আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না”। এখানে প্রথম আয়াতে আরবি শব্দ ‘সহিবুকুম’ বাংলা অর্থ ‘তোমাদের বন্ধু’ এই শব্দ দ্বারা রাসুল (সাঃ) কে বুঝান হয়েছে এবং করাইশদের সম্বোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ্‌ করাইশদের বলছেন যে, সেসব কথা তাঁর মনগড়া নয় কিংবা তাঁর প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা ঐ সবের উৎস নয়। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে তাঁর ওপর নাযিল করা হয়েছে এবং হচ্ছে। (তাফসীরে জাকারিয়া)।

তাহলে কোরআন ও কোরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে রাসুল (সা) যা বলেছেন তা মুলত আল্লাহ্‌ ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) এর মাধ্যমে রাসুল (সা) কে জানিয়ে দেন এবং রাসুল (সা) তা জানার পর সাহাবাদেরকে জানিয়েছেন। পবিত্র কোরআন যে আল্লাহর বানী তা এই আয়াতে আর স্পষ্ট হয়।

৬৯ নং সূরা, আল-হাক্কাহ, আয়াত ৪৪-৪৭ এ আল্লাহ্‌ বলেন,

৪৪- “যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত”

৪৫- “তবে আমি তাঁর ডান হাত পাকড়াও করতাম”।

৪৬- “তারপর অবশ্যই আমি তাঁর হৃদপিণ্ডের শিরা কেটে ফেলতাম”।

৪৭- “অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না”।

আশা করছি কোরআন যে আল্লাহর বানী তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। এবার আসা যাক মূল প্রশ্নে, কোরআনের প্রথম সূরা আল-ফাতিহা আল্লাহর বানী কী না? আবার ও বলে নেই ১৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে বড় বড় বিজ্ঞানী বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতগণ ও নাস্তিকরা ইসলামের ও কোরআনের ভুল ধরার জন্য ‘পি এইচ ডি’ ডিগ্রি নিয়েছে। কিন্তু তারা পারেনাই কারণ আল্লাহ্‌ কোরআনের ১৫ নং সূরা, আল-হিজর, আয়াত ৯ এ বলেন, “নিশ্চয়ই আমরাই কোরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তাঁর সংরক্ষক”। এই আয়াতের অর্থ হল – এই বানী, যার বাহক সম্পর্কে তোমরা খারাপ মন্তব্য করছ, আল্লাহ্‌ নিজেই তা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি একে কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়া থেকে হেফাজত করবেন। (ব্যাখ্যা- তাহসীরে জাকারিয়া)

এই সকল মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ্‌ নিজেই দিয়েছেন এই কোরআনের মাধ্যমে। আর এই প্রশ্নের উত্তর ও কোরআনে আল্লাহ্‌ দিয়ে দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনের ১৫ নং সূরা, আল-হিজর, আয়াত – ৮৭ তে আল্লাহ্‌ বলছেন, “ আর আমি তো তোমাকে দিয়েছি পুনঃপুন  পঠিত সাতটি আয়াত ও মহান কোরআন”।

এই আয়াতে আল্লাহ্‌ স্পষ্ট ভাবে সূরা ফাতিহার কথা উল্লেখ করেছেন।

এবার দেখা যাক রাসুল (সা) এই সূরা ফাতিহা সম্পর্কে কী বলেছেন।

(সহীহ আল বুখারী- তাওহীদ প্রকাশনী – ৪৭০৩, আধুনিক প্রকাশনী – ৪৩৪৩ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন – ৪৩৪৩ নং হাদিস।) হাদিসটি বড় তাই আমি শেষের অংশ বলছি। হাদিসের রেফারেন্স দেয়া আছে পুরোটা দেখে নিবেন।

“আবু সা’ঈদ ইবনু মু’য়াল্লাহ (রা) হতে বর্ণিত। ………………… তারপর তিনি বললেন, আমি মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগেই কি তোমাকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরাটি শিখিয়ে দেব না। তারপর রাসুল (সা) যখন মসজিদ থেকে বের হতে উদ্যত হলেন, আমি তাকে কথাটি মনে করিয়ে দিলাম। তিনি বললেন, সে সূরাটি হল, “আল্‌ হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন”। এটি হল, বারবার পঠিত সাতটি আয়াত এবং মহা কোরআন যা আমাকে দেয়া হয়েছে”।

একজন মুমিন মুসলমান হিসাবে বলবো, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল যা দিয়েছেন তা শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম। আল্লাহ্‌ সকলকে সঠিক দীন বুঝার তাওফিক দিন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *